যে জাতি যেরকম, সে জাতি সেরকম শাসকই পেয়ে থাকে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশের হিন্দুরা চরম হিন্দুত্ববাদী শাসক পেয়েছে, আমেরিকা পেয়েছে চরম খ্রিস্টবাদী শাসক। তবে ঐসব দেশগুলোতে বহু আগে থেকেই শাসক পর্যায়ে মুসলিম বিদ্বেষের চর্চা ছিল, কারণ অমুসলিম জনগোষ্ঠীর মানসিক চাহিদাই সেরকম। বাম শাসনামলেও কলকাতার হিন্দু এরিয়ায় কোন মুসলমানকে বাড়িভাড়া দেয়া হয়নি। এভাবে সমাজ লেভেলে মুসলিম বিদ্বেষের প্র্যাকটিস করতে করতে একপর্যায়ে অমুসলিমরা রাষ্ট্রীয় লেভেলে ট্রাম্প কিংবা মোদিকে পেয়েছে।

ঠিক সেভাবেই সামাজিক লেভেলে হিন্দুতোষণের চর্চা করতে করতে বাঙালি মুসলমান আওয়ামী লীগকে লাভ করেছে। মিয়ানমার আকাশসীমা লঙ্ঘন করার পরও গুলি চালানো হলো না বলে যারা আওয়ামী লীগকে দোষ দেয়, তাদের উচিত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আগে নিজেদের চেহারাটা দেখে নেয়া।

বিগত কয়েক দিন ধরে অনলাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের কটূক্তি, ঘৃণাবাক্য চরমে উঠেছে। সদ্যপ্রসূত রোহিঙ্গা শিশুদের প্রতি হিন্দুরা ঘৃণা উগড়ে দিচ্ছে হিন্দুরা, আর মুসলমানরা রয়েছে নিশ্চুপ। “রোহিঙ্গারা পশুর মতো সন্তানের জন্ম দেয়, বার্মিজরা তো আর হিন্দুদের মতো ‘উদার’ নয় যে এসব সহ্য করবে”, এভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়ার মতো করে মুসলমানদের নিয়ে কটূক্তি করা হচ্ছে।

চিন্তা করে দেখুন, কখন একটি জাতির শিশুদের জন্মকে পশুর সাথে তুলনা করা হয়? যখন সেই জাতিকে মানুষ বলে মনে করা হয় না , তখন। বাংলাদেশের মানুষ তারপরও হিন্দুদের কেশাগ্রও স্পর্শ করছে না, কারণ হিন্দুরা যে তাদের প্রতিবেশী, তাদের ভাই! রাজশাহীর এক হিন্দু নেতা এভাবে তার ওয়ালে স্ট্যাটাস দিয়েছে-

//রোহিঙ্গা মুস্লিম হলো সন্ত্রাসী, কালকা পেট থেকে যেটা বাইর হইবো সেটাও সন্ত্রাসী... এই কথার দ্বীমত অনেকেই করতে পারে, কিচ্ছু যায় আসে না। বাস্তবতা হলো রোহিঙ্গা মুস্লিম সন্ত্রাসী... //

সিলেটের এক হিন্দুকে দেখলাম ভারতের ৫৩ টন ত্রাণের বিপরীতে তুরষ্কের ১০০০টন ত্রাণের খবর তুলে ধরাতে এভাবে মুসলমানদের গালিগালাজ করছে-

//তুরস্ক ত্রান দিয়েছে ,সৌদী অারব ৪০০০ কোটি টাকা দিয়েছে এগুলো কি টিভি চ্যানেলের পিছনের খবর ?? ধর্মীয় দাঙ্গা সবদেশেই কমবেশী অাছে,,,বিশেষ করে যেখানে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের লোক একসাথে বাস করে,,,ভারতে জনসংখ্যা ১২৫ কে‌াটি প্রায়, যার মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশই মুসলিম,,,সেখানে দাঙ্গা হবে না, তাহলে কি,,,তোমাদের মোল্লা বাড়ী দাঙ্গা হবে ?,,,সমস্যাটা কি জানো ? সমস্যা তোমার লোকের রক্তে ,,,তোম‌াদের রক্তে পাকি লোহিত কোনিকা ঢুকে গেছে//

হ্যাঁ আসলে সমস্যা মুসলমানদের রক্তে, তাদের রক্ত মাছের চেয়েও ঠাণ্ডা। এভাবে যদি কোন অমুসলিম দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিককে উদ্দেশ্য করে বলা হতো, তাদের রক্তে দোষ আছে, তারা দাঙ্গা করে, তারা সন্ত্রাসী, তাহলে তাদের মৃত বাপদাদারাও বোধহয় কবর থেকে উঠে আসত কটূক্তিকারীকে হত্যা করার জন্য। কিন্তু বাঙালি মুসলমান বাহ্যিকভাবে জীবিত থাকলেও তাদের কোন বিকার নেই, কারণ তাদের শরীরের রক্ত যে মৃত লাশের চেয়েও ঠাণ্ডা!

এই জাতির শাসক তাহলে কেন তার সীমান্তে নাগরিক হত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে? কেন মিয়ানমারের আকাশসীমা লঙ্ঘনকে সামরিক কায়দায় রুখে দেবে? জাতিই তো তার উপযুক্ত নয়। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যদি প্রতিবেশী হওয়ার কারণে অকথ্য ভাষায় মুসলমানদের গালিগালাজ করার পরও হিন্দুদের রেহাই দেয়, সেক্ষেত্রে সরকারও প্রতিবেশী হওয়ার কারণে মিয়ানমারকে রেহাই দিয়েছে। সোজা হিসাব!

মানুষ চিন্তা করে, মিয়ানমারের অস্ত্রশস্ত্র বোধহয় বেশি, তাই তাদেরকে প্রতিঘাত করা যাবে না। আসলে অস্ত্র মূল বিষয় নয়, মূল বিষয়টি হচ্ছে ‘মোরালিটি’। আপনি আপনার প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে দৃঢ়সংকল্প কিনা, আপনি আপনার শত্রুকে যথার্থই ঘৃণা করেন কিনা, সেটিই মূল বিষয়। আপনার হাতে পিস্তল থাকলেও আপনি আপনার শত্রুর বুকে গুলি চালাতে পারবেন না, যদি আপনি ডিমরালাইজড হন। এদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও হিন্দুরা মুসলমান মেয়েদেরকে রেপ করে, ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে রেহাই পেয়ে যায় কারণ মুসলমানরা ডিমরালাইজড। এদেশের সেনাবাহিনীতে আমেরিকার চেয়ে এফ সিক্সটিন প্লেন বেশি থাকলেও তারা যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না, কারণ তারা ডিমরালাইজড। আর যদি মরালাইজড জাতি হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে বর্তমানে যা অস্ত্র রয়েছে, তার চেয়ে অনেক কম অস্ত্র নিয়েও মিয়ানমারের মতো একটি পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রকে অনায়াসে রুখে দেয়া যায়।

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে একটি প্রতিবেদনে রয়েছে যে, স্ক্রু ড্রাইভারের মতো ভোঁতা অস্ত্র দিয়েও সেখানে মুসলমান হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কারণ দাঙ্গাকারীদের মনে ছিল প্রবল ঘৃণা। মুসলমানরা যদি সেই ঘৃণাকে অতিক্রম করতে না পারে, তাহলে তারা হিন্দু-বৌদ্ধদের থেকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে না।

Post a Comment

 
Top