ভারতীয় মুসলমানদের কথিত ‘দেশপ্রেম’ এর জন্য বাংলাদেশের অনেক মুসলমানই তাদের প্রশংসা করে। এক হাজীসাহেব হজ্জ করে এসেছেন, তিনি হজ্জ ক্যাম্পে তার দেখা ভারতের মুসলমানদের প্রশংসা করলেন এভাবে যে, ভারতীয় মুসলমানরা তাদের দেশকে সবসময় ভালো বলে। ভারতে যে মুসলমানদের উপর এতো অত্যাচারের কথা শোনা যায়, সেটা ভারতীয় মুসলমানদের কথা শুনে বোঝারই উপায় থাকে না। এতো ভারতভক্ত তারা!

মাতৃভূমিকে বিধর্মীদের হাতে তুলে দিয়ে বিধর্মীচালিত শাসনব্যবস্থার তাঁবেদারি করা, দ্বীন ইসলাম কি এধরণেরই দেশপ্রেমের শিক্ষা দেয়? চোখে একরাশ অশ্রু মুবারক নিয়ে নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা শরীফ ছেড়েছিলেন, বারবার বলেছিলেন, হে প্রিয় মাতৃভূমি, আপনাকে ছেড়ে আমি যেতাম না। পরবর্তীতে সেই মক্কা শরীফেই তিনি সর্বেসর্বা হয়ে প্রবেশ করলেন। প্রকৃত ইসলাম অনুসারে এটাই হলো দেশপ্রেম।

ভারতে মুঘল শাসনের জন্ম দিয়েছিলেন বুযূর্গ বাবুর। ভারতের সিংহাসনে আরোহনের পরও বাবুরের মন থেকে মুছে যায়নি পূর্বপুরুষ তৈমুরের রাজধানী সমরখন্দ। তাই জীবদ্দশায় বারবার চেষ্টা করেছেন সমরখন্দ উদ্ধার করে ফের সেখানে তৈমুরী বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে। ১৪৯৭ সালে তিনি সমরখন্দ অধিকার করেন, কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই সমরখন্দের সিংহাসন তিনি হারান। সমরখন্দ উদ্ধার করতে গিয়ে ঘটনাক্রমে তিনি কাবুল দখল করেন, এরপর দখল করেন দিল্লী। শেষপর্যন্ত সমরখন্দের সিংহাসনে বসার সুযোগ উনার হয়নি, কিন্তু প্রত্যেক মুঘল রাজপুরুষের স্বপ্ন ছিল পিতৃপুরুষ তৈমুরের সমরখন্দ উদ্ধার করার। বাবুরের পর হুমায়ূন, তারপর আকবর, তারপর জাহাঙ্গীর, তারপর শাহজাহান। সেই শাহজাহানের আমলেও সমরখন্দ থেকে মুঘলদের দৃষ্টি সরেনি, তাই শাহজাহান দুই পুত্র আওরঙ্গজেব ও মুরাদকে পাঠালেন সমরখন্দ উদ্ধারের জন্য।

অর্থাৎ প্রকৃত ইসলামে দেশপ্রেম হচ্ছে, নিজ জন্মভূমির কর্তৃত্ব নিয়ে সেখানে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু ভারতীয় মুসলমানদের ‘দেশপ্রেম’ প্রকৃত ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, কারণ তারা পালন করে ‘গৃহ-ইসলাম’। হিন্দুরা যেমন তাদের গৃহদেবতাকে নিজেদের মতো করে সাজায়, ঠিক সেভাবেই ভারতীয় মুসলমানরা ইসলামের উপর, স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার গুণাবলির উপর নিজস্ব মনগড়া মতবাদ আরোপ করে ইসলামের একটি নিজস্ব ভার্সন সৃষ্টি করে নিয়েছে। ভারতীয় ‘গৃহ-ইসলাম’ ধর্মে যে ‘আল্লাহ’র কল্পনা করা হয়, তা নাকি হিন্দুধর্মের প্রতি সহনশীল! হিন্দুদের দেবতা বিধায় সেই ধর্মে গরু জবাই মস্ত পাপ, যে যতো বেশি হিন্দুদের তুষ্ট করতে পারে সে ততো ভালো মুসলমান। যে ভারতের হিন্দু রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি যতোবেশি অনুগত হতে পারে, ভারতীয় মুসলমানদের চোখে সে ততো ভাল দেশপ্রেমিক মুসলমান! (গৃহ-ইসলাম সম্পর্কে পূর্বের পোস্টের লিঙ্ক: https://goo.gl/QW14Uo)

এই কথাগুলো বলছি, কারণ ভারতীয় মুসলমানদের ঔদ্ধত্য নিয়ে আমি বীতশ্রদ্ধ। এদেরকে বোঝাতে গেলে, এদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে গেলে এরা উল্টো বলে, তোমরা বাংলাদেশী মুসলমানরা হলে গিয়ে কাফের। খবরদার আমাদের ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বলবে না। মেরা ভারত মহান! ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে বলতে গেলে সানাউল্লাহ খানের মতো লোকেরা উদ্ধতের মতো বলে, ভারতীয়ত্ব আর হিন্দুত্ব এক নয়। বাংলাদেশে যেহেতু হাসিনা ক্ষমতায় আছে, তাই ভারতের আগে বাংলাদেশের ধ্বংস চাইতে হবে (অথচ ভারতই কিন্তু হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে)। মেরা ভারত মহান!

এসব ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা এদের মাথা থেকে কখন দূর হবে, তা আল্লাহ পাক ভালো জানেন। ভারতীয় মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ভ্রান্তি হলো, এদের ধারণা ভারত রাষ্ট্রটা বোধহয় তাদের নিজস্ব। অথচ তারা যে নিজভূমে পরবাসী, তাদের কোন গুরুত্বই যে ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে নেই, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধিও ভারতীয় মুসলমানদের নেই। কলকাতার হিন্দুদেরকে দেখা যায় ভারতের পক্ষে খুব গলাবাজি করতে, যদিও বাস্তবতা হলো তারা ভারতের তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। ঠিক সেভাবেই ভারতীয় মুসলমানদের ভারতের চৌদ্দ নম্বর জনগোষ্ঠী হওয়ার পরও তাদের ধারণা তাদের দেশ ‘মহান দেশ’। সেই ‘মহান দেশ’ এ নাকি হিন্দু মুসলমান ‘সবার অধিকার সমান’, তাই তাদের যতোই পাছা মারা হোক না কেন তাদের ধারণা তারা হলো গিয়ে ‘ফারস্ট কেলাস’ জনগোষ্ঠী। জাকির নায়েককে যখন ভারত থেকে তাড়ানো হয়নি, তখনও সে ডায়াসে দাঁড়িয়ে ভারতের প্রশংসাই করত। এভাবে দিনের পর দিন প্রতিবাদ না করে হিন্দুত্ববাদকে প্রশ্রয় দেয়ার কারণেই ভারতে আজ বিজেপির উত্থান হয়েছে।

Post a Comment

 
Top