তিন তালাক অর্থ কী? এর অর্থ স্থায়ী বিবাহ বিচ্ছেদ। স্থায়ী বিবাহ বিচ্ছেদ হলে সমস্যা কোথায়? তাতে নাকি-

“বিচ্ছেদ হওয়া নারীর আর বিয়ে হবে না”

প্রশ্ন হতে পারে, এই মেন্টালিটি কি মুসলিম মেন্টালিটি? এটা মুসলমানদের তো নয়ই, আহলে কিতাব তথা ইহুদী-খ্রিস্টান কারোরই মেন্টালিটি নয়। আমরা যদি মুসলিম জাতির ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করি, দেখব এটি খুব অগ্রসর একটি সমাজ। এখানে নারী সম্পত্তির মালিক হতে পারে, ব্যবসা করতে পারে, স্বাধীনভাবে যে কাউকে বিয়ে করতে পারে এবং প্রয়োজনে বিচ্ছেদের আশ্রয় নিতে পারে। ইসলামী দৃষ্টিকোণে নারীকে পুরুষের মতোই মানুষ হিসেবেই দেখা হয়, যে কারণে কোন পুরুষের সাথে তার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তার সাথে এঁটো খাবারের মতো আচরণ করা হয় না। যে একজনের সংসার তো সে করেছে, একজনের বিছানাসঙ্গী সে ছিল, তাকে আর গ্রহণ করা যাবে না।

যে কারণে ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, কোন নারীর তালাক হওয়ার সাথে সাথেই তার সাথে অন্য কারো বিয়ে হয়ে যেত। পূর্বের স্বামী মারা গেলে কিংবা তালাক হলে এতো দ্রুত বিয়ের প্রস্তাব আসত, যে শরীয়তের মাসয়ালা করা হয়েছিল যে কোন নারীর ইদ্দত পালন করার সময়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া যাবে না।

বলা বাহুল্য, সমাজ যদি এতোটা প্রগতিশীল হয়, তাহলে তালাক কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সমাজে যদি কুপমণ্ডুকতা থাকে, যদি ধরে নেয়া হয় যে কোন মেয়েকে বিয়ে দেয়া মানে সেই মেয়ের আর কোথাও নড়ার জায়গা নেই, সেক্ষেত্রে ঐ সমাজের নিকট ‘তালাক’ সমস্যা বলে মনে হতেই পারে।

হিন্দুসমাজে মহিলাদের অবস্থা হচ্ছে টিস্যু পেপারের মতো, একজন নাক মুছলে অন্যজন সেটা ব্যবহার করতে পারে না। ভারতীয় লেখক খুশবন্ত সিং তার বইতে লিখেছে, To this day, the Hindustani word for a widow and a prostitute is the same: raand. (লিঙ্ক- https://goo.gl/MiuLh9)

অর্থাৎ হিন্দু সমাজে যেহেতু বিধবাদের বিয়ে হয় না, তাই স্বামী মরার পর হিন্দু মহিলাদের বেশ্যাবৃত্তি গ্রহণ করাটা এতোটাই স্বাভাবিক যে, এখন পর্যন্ত হিন্দি ভাষায় বেশ্যা ও বিধবা এই দুটিকে একই শব্দ দ্বারা বোঝানো হয় আর তা হলো ‘রান্ড’। হিন্দুসমাজে একটি মেয়েকে স্বাধীন কোন মানুষ হিসেবে না করে কোন না কোন পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় দেখে এরকম পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারতীয় মুসলমানরা হিন্দুদের পাশে বসবাস করে বিধায় তারাও একই হিন্দুয়ানী সংকীর্ণ মানসিকতায় আক্রান্ত। ভারতীয় মুসলমানদের মনমানসিকতা যদি প্রশস্ত হতো, তাহলে তারা অবশ্যই তালাকের বিরুদ্ধে যে কোন পদক্ষেপের বিরোধিতা করত। কারণ তালাক না থাকার অর্থই হলো মহিলাটি কোন পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, তার আর যাওয়ার কোন জায়গা নেই। যে কারণে বিশ্বের যে কোন জায়গাতেই তালাককে নারী স্বাধীনতার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

হিন্দুরা একটি হাস্যকর দাবি করছে, যে মোদি তালাক উঠিয়ে দিয়ে নাকি বিরাট সংস্কার করে ফেলেছে! গোমূত্র খাওয়া হিন্দুরা আসলে সংস্কারের অর্থও জানে না। সংস্কার তখনই হতো, যখন এটি নিশ্চিত করা যেত যে কোন মহিলার তালাক হলেও সমাজ তাকে দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ বলে বিবেচনা করবে না। কিন্তু তা না করে তালাক উঠিয়ে দিয়ে আরো কুপমণ্ডুকতার বিস্তার ঘটানো হল মাত্র।

আসলে মানুষ তো জানে না, কোন হিন্দুর দ্বারা কিন্তু কখনোই হিন্দুসমাজের সংস্কার হয়নি। ব্রিটিশ আমলে হিন্দুসমাজ থেকে ‍চ্যুত হয়েছিল যারা, তারাই অহিন্দু ব্রিটিশদের সাহায্য নিয়ে হিন্দুসমাজের পাছা চাবকে সেটার সংস্কার করেছে। রামমোহন-ঈশ্বরচন্দ্র এরা কেউ হিন্দু ছিল না। রামমোহনের ব্রাহ্মসমাজের সদস্যদের ধর্মগ্রন্থ ছিল খ্রিস্টানদের বাইবেল। সুতরাং মোদির মতো একটা মূর্খ নমশূদ্র, যার শিক্ষাগত সনদও ভুয়া বলে প্রমাণিত, সে এসে সংস্কার করে ফেলবে এটা হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়।

সমস্যা তিন তালাকের নয়, বরং সমস্যা সংকীর্ণ মানসিকতার। এই সমস্যার সমাধান তখনই হবে, যখন ভারতীয় মুসলমানরা সংকীর্ণ হিন্দু মানসিকতা পরিহার করবে এবং হিন্দুরা তাদের মেয়েদেরকে আর দশটা মানুষের মতো সম্মান দিতে জানবে।

Post a Comment

 
Top