গত কয়েক মাস আগে ব্রিটেনে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে এসিড হামলার শিকার হওয়া থেকে কোনরকমে বেঁচে গিয়েছিল তামিম ইকবাল। দেশে এসেও তামিম কোন অভিযোগ করেনি, কেন করেনি? করেনি কারণ মুসলমান হিসেবে তাকে ‘অছাম্প্রদায়িক’তার প্রমাণ দিতে হবে, খ্রিস্টান উগ্রপন্থীরা এসিড নিয়ে তাড়া করে তার স্ত্রীর মুখ ঝলসে দিতে চাইলেও তাকে বোবা হয়ে থাকতে হবে।

কিন্তু হিন্দু-বৌদ্ধরা চুপ করে থাকে না, পারলে নিজেরা ঘটনা সাজিয়ে হয়েও মুসলমানদের বিরুদ্ধে গলাবাজি করে। বাংলাদেশে বেনাপোলে কোন বৌদ্ধ ন্যাড়া ভিক্ষুকে কি ভয় দেখিয়ে ভিডিও করা হলো, তাতে গোটা দেশের নাস্তিক ও সেক্যুলার সম্প্রদায় নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলেছে। ইতিমধ্যে ‘ভয় দেখানো’ তিনজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে (https://goo.gl/CHsLkK) পাশ্ববর্তী মিয়ানমারে বৌদ্ধরা যেখানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করছে, সেখানে একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে এধরণের অছাম্প্রদায়িক ন্যাকামি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

“ইছামতি ধাতুরত্ন বিহার ইছামতি, রাঙ্গুনীয়া পৌর এলাকা, রাঙ্গুনীয়া, চট্টগ্রাম। মোবাইলঃ +৮৮ ০১৮২৭ ৬৭০৩৬৬, ঢাকা কার্যালয়ঃ ৯, ডি, ফেইনাজ এর্পাটমেন্ট ৩২/২ পুরানোপল্টন (পপুলার), ঢাকা -১০০০ মোবাইলঃ +৮৮ ০১৯১১ ৪৪৮১৬২” এই ঠিকানা থেকে www.dhammainfo.com নামে বাংলাদেশের বৌদ্ধদের একটি ওয়েবসাইট চালানো হয়। দৈনিক প্রথম আলোতেও এই ওয়েবসাইটটি প্রকাশের সময় বিজ্ঞপ্তি ছাপানো হয়েছিল। এই ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালে একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছিল “টাইম ম্যাগাজিনের হলুদ সাংবাদিকতা, একজন বৌদ্ধভিক্ষু ও প্রকৃত সন্ত্রাস” নামে। আর্টিকেলটিতে মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধ নেতা আসিন ভিরাথুর পক্ষ নিয়ে মুসলমানদের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছিল।

আর্টিকেলের শুরুতেই রোহিঙ্গারা যে আরাকানের অধিবাসী, তা অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “এসব রোহিঙ্গা ছিল রাখাইন রাজ্যে নিতান্ত অতিথি। তাই অতিথি হয়ে নাগরিকত্ব দাবি করা মানে আশ্রিত হয়ে আশ্রয় দাতার ভুমিদখল করার শামিল”। লেখাটিতে রোহিঙ্গাদের ধর্ষক ও লুটপাটকারী বলে মিথ্যা অপপ্রচার করে রাখাইন বৌদ্ধদের হামলাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। মুসলমানদের জুম্মার নামাযকে কটাক্ষ করে লেখা হয়েছে-“৮ জুন শুক্রবার, মুসলিমদের জুম্মাবার, সব দেশের সব জুম্মাবারের মতো বার্মার ৯০ ভাগ রোহিঙ্গা মুসলিমদের আবাস্থল মংডু এলাকার রোহিঙ্গারা জুমার নামাজ শেষে দল বেঁধে বহ্মূ গ্রামে রাখাইন পল্লীতেই প্রথম আগুন লাগিয়ে দেয়।”

আবার উগ্র বৌদ্ধ ভিক্ষু আসিন উইরাথুর পক্ষাবলম্বন করে বলা হয়েছে, “বিরাথু বৌদ্ধ ধর্মের নিয়ম নীতি মেনে ধর্ম ও সমাজকে রক্ষা করার জন্য কাজ শুরু করেছেন এবং সবাইকে ধর্ম ও সমাজ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছেন। বার্মায় তিনি যে ডাক দিয়েছেন তা কোন ভাবেই সহিংস আন্দোলন নয়। তাঁর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফলে স্বাভাবিকভাবেই সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাপন্থী ক্রিস্টিয়ান ও পাকিস্থান ও মধ্যপ্রাচ্যের তাদের দোসরা খুশি হতে পারছে না। “

উগ্র বৌদ্ধদের মুসলিমবিরোধী এই জঘন্য আর্টিকেলটি ২০১৩-১৪ সালে ফেসবুকে বিভিন্ন বৌদ্ধ পেজে পোস্ট করা হয়েছিল। যেমন-
১) Buddha-"জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক" : https://goo.gl/PLF3sn
২) Atish Dipankar অতীশ দীপঙ্কর: https://goo.gl/5ju9k8
এমনকি ‘রতন বড়ুয়া’ নামক চট্টগ্রামের এক বৌদ্ধ নেতাও শেয়ার দিয়েছিল আর্টিকেলটি: https://goo.gl/WJCjYD

তখন বিষয়টি নিয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করায় www.dhammainfo.com থেকে আর্টিকেলটি সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। সাথে সাথে ওয়েবসাইটটিতে দেয়া বৌদ্ধ মন্দিরের ঠিকানাও মুছে দেয়া হয়েছিল। তবে আর্কাইভে এখনো পাওয়া যায় মূল ঠিকানাসহ ওয়েবসাইটটি: https://goo.gl/aVaj2E

এদেশে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের মন্দিরের ঠিকানা ব্যবহার করে, ওয়েবসাইট খুলে রোহিঙ্গাদের ধর্ষক, খুনী বলে অপপ্রচার চালায়। এর দ্বারাই প্রমাণিত হয়, তারা বার্মিজ বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদেরই একটি শাখা সংঘ মাত্র। কিন্তু তারপরও বাঙালি মুসলমান চিন্তা করে, থাক বার্মার বৌদ্ধরা মুসলমান মারলে ‘দিশি বৌদ্ধদের মারব কেন’? মুসলমানরা সারাদিন হিন্দু-বৌদ্ধের পায়ে তৈল মালিশ করেও দিনশেষে ন্যাকামি করতে থাকে, হায় হায় তবে কি আমি ‘ছাম্প্রদায়িক’ হইয়া গেলাম! এরকম একটি জঘন্য আর্টিকেল প্রচারের পরও “ধাতুরত্ন বিহার ইছামতি, রাঙ্গুনীয়া পৌর এলাকা, চট্টগ্রাম” এর কি কিছুই হবে না?

এভাবে বাঙালি মুসলমানরাও অচিরেই রোহিঙ্গাদের মতো আরেকটি উদ্ধাস্তু জাতিতে হবে। কারণ বাঙালি মুসলমানরা তাদের প্রতিবেশী হিন্দু-বৌদ্ধদেরকে যতোই ভালোবাসুক না কেন, হিন্দু-বৌদ্ধরা কিন্তু তাদেরকে রোহিঙ্গাই বানাতে চায়। বাঙালি মুসলমানগুলো বুঝতেই চায় না যে, বিধর্মীদের মধ্যে স্বদেশী-বিদেশী কোন ভাগ নেই। বার্মিজ বৌদ্ধ-দেশী বৌদ্ধের বিভাজন যেটা করা হয়, সেটা নিতান্তই হাস্যকর। নিচের ছবিটির মতোই বার্মা-শ্রিলঙ্কা-বাংলাদেশ, সব দেশের হিন্দু-বৌদ্ধরা ‍মুসলমানদের বিরুদ্ধে সবাই এক।

Post a Comment

 
Top