উপরের ডানপাশের ছবিটি ফেসবুকে অনেকেই দেখেছেন। ছবিটির মাঝখানে বসা ব্যক্তিটি হলো আবদুর রশীদ, তৎকালীন সময়ে অল বার্মা স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সভাপতি। তার ডানে বসা ব্যক্তিটি হলো বার্মার ডাইনি সুচির পিতা অং সান। বামে বসা ব্যক্তিটি হলো আবদুর রাজাক, বার্মা মুসলীম লীগের সভাপতি।

সাধারণত কোন সংগঠনের প্রধান বা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিই মাঝের চেয়ারটাতে বসে। মাঝের চেয়ারে বসা আবদুর রশীদ শুধু অং সানের নেতা ছিল না, সে ছিল গোটা বার্মার ছাত্রসমাজের নেতা। এই ছবিটির দ্বারাই কিন্তু প্রমাণিত হয় যে, তৎকালীন সময়ে বার্মায় মুসলমানদের অবস্থান আসলে কোথায় ছিল। স্বাভাবিকভাবেই বার্মার মুসলমানরা তখন ছিল চাকরি-ব্যবসা-শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রণী জনগোষ্ঠী। শুধু বার্মার স্থানীয় মুসলমানরা নয়, সাথে সাথে চট্টগ্রামের শিক্ষিত মুসলমানরাও বার্মায় গিয়ে চাকরি করত। বার্মার সমাজের নেতৃত্বও তাদের হাতেই ছিল। এখনো চট্টগ্রামের স্থানীয়দের স্মৃতি থেকে তা মুছে যায়নি। বাংলাপিডিয়ায় এ প্রসঙ্গে রয়েছে যে-

“চট্টগ্রামের অধিবাসীগণ অত্যন্ত উদ্যোগী এবং দেখা যায় যে, বহুকাল আগে থেকেই তারা বাড়িঘর ছেড়ে উন্নততর সুযোগ সুবিধার সন্ধানে বের হতো। অনেকেই সমুদ্রযাত্রীর জীবন বেছে নিত এবং অন্যরা প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে চলে যেত। চট্টগ্রামবাসীদের অনেকেই বার্মায় কাঠ ও চালের লাভজনক ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিল। বর্মীদের মধ্যে অ-বর্মীয় সবকিছুর বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান দেখা দিলে চট্টগ্রামবাসীদের মধ্যে বার্মা ত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। তাদের প্রত্যাবর্তনের ফলে নগরীর অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মে একদল অত্যন্ত দক্ষ লোকের সমাগম ঘটে। তারা তাদের সঙ্গে নিয়ে এসেছিল ব্যবসায়িক উদ্যোগ, পুঁজি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান যা নগরীর অর্থনীতিকে বেশ চাঙ্গা করে তোলে। ”

আজকাল হিন্দু ও নাস্তিকদের অনেকেই এই রোহিঙ্গাদের অশিক্ষিত-অনগ্রসর বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে। অথচ রোহিঙ্গারা নয়, মূলত রাখাইনরাই ছিল অনগ্রসর জনগোষ্ঠী। বার্মার রাখাইন বা মগ জনগোষ্ঠী হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের মতো। সবাই জানে যে, পার্বত্য উপজাতিগুলোর মধ্যে আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে শিক্ষিত তো দূরের কথা, ভদ্রোচিত পোষাক পরিহিত মানুষও খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর ছিল। পুরনো সময়কার ট্রাইবাল হিল এরিয়ার ফটোগ্রাফগুলোতেও এর প্রমাণ মেলে।

আধুনিক বিশ্বে যতো জায়গায় মুসলমানরা স্থানীয় বিধর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছে, ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে ঐসব জায়গায় মুসলমানরা একদা সম্মানিত ও অগ্রসর জনগোষ্ঠী ছিল। কিন্তু বিধর্মীদের প্রতি অতিরিক্ত বিশ্বাস ও মুহব্বতের কারণে মুসলমানরা তাদের অবস্থান ছেড়ে দিয়ে যখনই অনগ্রসর-অশিক্ষিত বিধর্মীদের হাতে ক্ষমতার দণ্ড তুলে দিয়েছে, তখনই তাদেরকে লাঞ্ছিত-অবদমিত জনগোষ্ঠীতে পরিণত হতে হয়েছে।

ফিলিস্তিনে একদা মুসলমানরা ছিল ধনী-অগ্রসর জনগোষ্ঠী। তাদের ছিল শত শত একর অলিভের বাগান, বিরাট প্রতিপত্তি। কিন্তু তারা ইহুদীদের বিশ্বাস করেছিল, স্থান দিয়েছিল তাদের নিজস্ব ভূমিতে। ফলে তাদেরকে আজ উদ্ধাস্তু হতে হয়েছে। ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুসলমানরা ছিল দিল্লী-আগ্রার মুঘল শাসনের উত্তরাধিকারী। ব্রিটিশ আমলেও তাদের সামাজিক প্রতিপত্তি সম্পর্কে নীরদ সি চৌধুরীর মতো হিন্দু লেখকরাই লিখে গিয়েছে-

“হিন্দুস্তানে হিন্দু মাত্রেই সভ্য বলিয়া গৃহীত হইতে চাহিলে মুসলমানী রীতি ধরিত, অর্থাৎ তাহাদের ভাষা হইত উর্দু, পোশাক হইত আচকান ইত্যাদি, আদব-কায়দাও হইত মুসলমানসুলভ। এখন যেমন সামাজিক প্রতিষ্ঠা জন্য লোকে সাহেব হইতে চায়, তখন তাহারা মুসলমান হইত। ইহা ছাড়া সামাজিক জীবনে বিদগ্ধ হিন্দু, মুসলমানেরই সঙ্গে মেলামেশা করিত বেশি।”

সেই হিন্দুস্তানী মুসলমানরা আজ মোদি-যোগীর অধীনে চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিক। কারণ তারা হিন্দুদের বিশ্বাস করেছিল, নিজেদের ভাগ্য হিন্দুদের হাতে সঁপে দিয়েছিল। সাতচল্লিশে তাদের প্রতিপত্তি ব্যবহার করে তারা অনায়াসে হিন্দুস্তান থেকে আলাদা হয়ে নিজস্ব দেশ গঠন করতে পারত, কিন্তু তারা তা করেনি। তারা বলেছিল হিন্দুরা তাদের ভাই, হিন্দুদের সাথে তারা থাকবে। রোহিঙ্গারা বলেছিল বৌদ্ধরা তাদের ভাই। ফিলিস্তিনিরা বলেছিল, ইহুদীরা তাদের ভাই।

অথচ আল্লাহ পাক তিনি বলেন, নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে প্রথমত ইহুদীদের, অতঃপর মুশরিকদের। (সূরা মায়িদা, ৮২) এই শত্রুগুলো একদা মুসলমানদের পায়ের তলায় ছিল, যাদেরকে ঘাড়ে তুলে মুসলমানরা লাঞ্ছিত হয়েছে। ফারসীতে একটি কবিতা রয়েছে,

কমজাত আগার বুযূর্গ শাওয়াদ
রনজে দেহা উসতাযে রেহা

অর্থাৎ নিচুশ্রেণীর লোকদের বুযূর্গ বানালে তারা মানী লোকদের মানহানি করবে। ফিলিস্তিনে করেছে, ভারতে করেছে, বার্মায় করেছে, এখন পালা বাংলাদেশের। বাংলাদেশে গত দশ বছর ধরে যেভাবে ফ্রি-স্টাইলে হিন্দুতোষণ করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের মুসলমানদেরও রোহিঙ্গাতে পরিণত হওয়ার ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। সরাসরি মোসাদের মেন্দি সাফাদির সাথে মিটিং করে এদেশে হিন্দুরা রাজনৈতিক দল খুলছে। ইসরায়েলি পত্রিকায় প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এদেশের হিন্দুদেরকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে পরাধীন করার।

অন্য কোন জাতি হলে এতক্ষণে এদেশের প্রত্যেকটি হিন্দু-বৌদ্ধকে ধরে ধরে হত্যা করা হতো। কিন্তু আফসোস, এতোকিছুর পরও একটি হিন্দুর মরামুখও যে এদেশে আমরা দেখতে পাই না! যেখানে বার্মায় একদা শিক্ষিত অগ্রসর জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদেরকে অশিক্ষিত করে রাখা হয়, সেখানে বাংলাদেশে নর্দমা থেকে নমশূদ্র-উপজাতিদের তুলে এনে তাদেরকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানানো হয়, গর্দানে চর্বি জমিয়ে শক্তিশালী করা হয়। রোহিঙ্গাদের মতো বঙ্গোপসাগরে বৌ-বাচ্চা নিয়ে নামলে তবে বাঙালি মুসলমানদের মাথা থেকে এই অছাম্প্রদায়িকতার ভূত নামবে, কিন্তু ততোক্ষণে অনেক অনেক দেরী হয়ে যাবে।

Post a Comment

 
Top