বাংলাদেশে নাস্তিকদের ঘ্রাণশক্তি কুকুরের চেয়েও প্রবল। নাস্তিক হওয়ার পরও কেন তারা হিন্দুদের দুর্গাপূজা নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি করে, তার উত্তরে এক নাস্তিক লিখেছে, বাতাসে আসলেই পূজার গন্ধ পাওয়া যায়, তবে আমি কী করবো?

অথচ এই পূজার গন্ধ হিন্দুধর্মই কিন্তু পায়নি। এই শরৎকালে যে পূজাটা হয়, তাকে হিন্দুরা বলে থাকে ‘অকাল বোধন’ অর্থাৎ শাস্ত্রীয়মতে দুর্গাপূজার সময় শরৎকাল নয়। কেন দুর্গার `অকাল বোধন' হওয়ার দরকার হলো, তার উত্তর খুঁজতে হলে চলে যেতে হবে ব্রিটিশ আমলে। আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয়তে প্রাবন্ধিক নির্মল করের ‘ক্লাইভের দুর্গোৎসব’ প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে যে-

//১৭৫৭-র ২৩শে জুন পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজের পরাজয়। অন্যভাবে বলা যায়, ঐ তারিখে ভারতবাসীর পরাজয় আর ইংলন্ডবাসীর বিজয়। নবকৃষ্ণ দেব ছিল ইংরেজদের চাকর। কোনো সময় ছিল ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রাইভেট টিউটর। উন্নতি করে হয়েছিল তালুকদার, চার হাজারি মনসবদার। পলাশীতে সিরাজের পতনে যারা সবচেয়ে বেশি উল্লসিত হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিল নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র আর কলকাতার নবকৃষ্ণ দেব। হানাদার বেনিয়া কোম্পানীর জয়কে এরা হিন্দুর জয় বলে মনে করলো। ক্লাইভ চাইল এই জয়কে সেলিব্রেট করতে। ক্লাইভের পরামর্শে মুশকিল আসান করলো চাকর নবকৃষ্ণদেব। বাসন্তী পূজাকে পিছিয়ে আনলো শরৎকালে। সে বছর নবকৃষ্ণদেব আর নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে শরৎকালীন দুর্গাপূজার মাধ্যমে ইংরেজদের বিজয় উৎসবটি পালন করলো। তত্ত্বজ্ঞদের মতে, এর আগে শারদীয় দুর্গাপূজা ছিল না, ছিলো বাসন্তীপূজা।//

অর্থাৎ শরৎকালে ব্রিটিশ দালাল নবকৃষ্ণ পেয়েছিল দালালির গন্ধ, যেই গন্ধের প্রভাব থেকে এখনকার নাস্তিক নামধারী হিন্দুত্ববাদী দালালেরাও মুক্ত নয়। ‘যে উৎসব সর্বজনীন’ নামে একটি লেখা ওমেনচ্যাপ্টারে ছাপা হয়েছে, লেখাটি বিভিন্ন হিন্দু গ্রুপ এবং পেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লিখেছে নবনিতা চৌধুরীর ডিবিসি চ্যানেলের সংবাদ পাঠিকা ইশরাত জাহান উর্মি। সে লিখেছে, নাস্তিকেরা ইসলাম ধর্ম অবমাননা করবেই আর হিন্দুধর্ম নিয়ে গদগদ হবেই। কারণ প্রভুভক্ত কুকুর যেভাবে দূর থেকেও মনিবের ছুঁড়ে দেয়া হাড্ডির গন্ধ পায়, ঠিক সেভাবেই নাস্তিক দাবি করার পরও এরা নাকি পূজার গন্ধ পায়! শুধু তাই নয়, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পূজা কেন ভালো আর ঈদ কেন খারাপ, এইধরণের সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক বিশ্লেষণে লিপ্ত হয়।

১) বাতাসে আসলেই পূজার গন্ধ পাওয়া যায়, তার আমি কী করবো? শরৎকালে কাশফুল এবং শিউলি ফুল ফোটে, জলে পম্পা মানে পদ্ম, শরতকালে আকাশে সাদা-নীল মেঘ ভাসে। ঈদ শীতে হতে পারে, ঝাঁ ঝাঁ গ্রীষ্মকালে হতে পারে, ঝুম বর্ষায় হতে পারে, শরতে বা হেমন্তেও হতে পারে। প্রকৃতিগত ভাবে পূজার যে সৌন্দর্য্য-অত্যন্ত ব্যথিতভাবে জানাচ্ছি যে, বেচারি ঈদের তা নাই।

২) তারপর আছে নারী-পুরুষ হাতে হাত মিলিয়ে ঢাকের তালে নাচ, আছে সিঁদুরখেলার মতো রং মাখামাখি-আমাদের ধর্মে মানে মুসলমান ধর্মে এরকম সার্বজনিনতা কল্পনা করা যায়?

ওমেনচ্যাপ্টারের ঐ আর্টিকেলটিতে ঈদের সাথে পূজার তুলনা করে উপরের দুটি উস্কানীমূলক অংশ চোখে পড়ল। হয়তো ইশরাত উর্মি চিন্তা করেছে, “বেশ অপমান করেছি ইসলাম ধর্মকে, এবার সুপ্রীতি ধর দিদি খুশিতে বাকবাকুম হয়ে আমাকে ওমেনচ্যাপ্টারের টপ লেখক বানিয়ে দিবে। আর বস নবনিতা চৌধুরী বাড়িয়ে দিবে পূজার বোনাস। ” কিন্তু উপরের লাইন দুটিতেই ফুটে উঠেছে হিন্দুধর্মের সংকীর্ণতা ও নীচতা।

১ নং লাইনের উত্তরে বলতে হয়, শরৎকাল ছাড়াও কি বছরের অন্য কোন সময়ে হিন্দুদের পূজা হয় না? সেক্ষেত্রে ঐসব পূজা নিশ্চয়ই অসুন্দর, ঠিক কিনা? আসলে মুসলমানদের উৎসব কোনভাবেই নির্দিষ্ট কোন ঋতুবৈশিষ্ট্যের সাথে মিলিয়ে করা সম্ভব নয়, কারণ ইসলাম একটি বিশ্বজনীন ধর্ম। বিশ্বের যে জায়গায় যে ঋতুই থাকুক না কেন, ইসলাম ধর্মীয় উৎসব সবজায়গায় পালিত হয়ে থাকে।

বিপরীতে হিন্দুধর্ম একটি বদ্ধ ধর্ম। শরৎকালের যে বৈশিষ্ট্য লেখায় তুলে ধরা হয়েছে, তা বিশ্বের সিংহভাগ জায়গাতেই নেই। কারণ হিন্দুধর্ম তো কেবল নির্দিষ্ট সীমারেখার নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য, এটি কোন বিশ্বজনীন ধর্ম নয়। সাগর পাড়ি দিলেই তাই হিন্দুধর্মে জাত যায়।

২য় লাইনটি নিতান্তই হাস্যকর। হিন্দুরা কি বলতে চায়, তারা সার্বজনীনতা বলতে কেবল নারী-পুরুষ হাত ধরাধরি করাটা আর রং মারামারি করাটাই বোঝে? তারা কি দিবে তাদের স্ত্রী-কন্যার হাত যাকে তাকে স্পর্শ করতে দিতে? এতোটাই নীচ তাদের ধর্ম?

ওমেনচ্যাপ্টার নামক ওয়েবসাইটটির নাম হিন্দুচ্যাপ্টার রাখলে কী হয়, যদি তার কাজই হয় হিন্দুধর্মের পক্ষ নিয়ে ইসলাম ধর্ম অবমাননার প্রচেষ্টা চালানো? কিন্তু তারা তো তা করবে না, কারণ হিন্দুধর্ম যে বিশ্ববাসীর নিকট নীচ-হীন ধিকৃত কুসংস্কারাচ্ছন্ন হাস্যকর মতবাদ, সে সম্পর্কে তারাও ওয়াকিফহাল। হীনমন্যতা ও আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা জাতি এরা, তাই নিজেদেরকে জাহির করতে অন্যকে হেয় করার জোর প্রচেষ্টা চালাতে হয় আর হিন্দুত্ববাদী হয়েও গিরগিটির মতো নাস্তিকতা কিংবা নারীবাদের ছদ্মবেশ তাদেরকে ধারণ করতে হয়।

Post a Comment

 
Top