রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি, কাশ্মীরী ও ভারতীয় মুসলমান, এরা সবাই সাতচল্লিশের ‘অছাম্প্রদায়িক’ চেতনার ফসল। সাতচল্লিশে যখন এদের সামনে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় উপস্থিত হয়, তখন তাদের পূর্বপুরুষেরা যে ভুল করেছিল, তার পরিণতিই আজপর্যন্ত তারা বহন করে চলেছে। ইহুদীরা কিভাবে ফিলিস্তিন দখল করেছিল, এ নিয়ে বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে-

“ফিলিস্তিনী আরবদের পাশেই ছিল ইহুদীদের বসবাস। সেখানে আরবদের কৃষি খামার ছিল। সে সময় মুসলমান এবং ইহুদীদের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ১৯৩০'র দশকে ফিলিস্তিনীরা বুঝতে পারলো যে তারা ধীরে-ধীরে জমি হারাচ্ছে।” (https://goo.gl/HmPTny)

অর্থাৎ ইহুদীরা যে বিপক্ষে চলে যাচ্ছে. তারা যে আগের মতো আর ‘বন্ধু’ হয়ে থাকবে না, এটা বুঝতে বুঝতেই ফিলিস্তিন আরবদের হাতছাড়া হয়ে গেল। রোহিঙ্গাদের ইতিহাসও সেরকম, মাত্র কয়েকদিন আগেও বার্মার সামরিক জান্তার বিপরীতে রোহিঙ্গা মুসলমানরা সুচিকেই সমর্থন করতো। সুচিকে তারা মিত্র ভাবত। থাইল্যান্ড থেকে রোহিঙ্গা নেতা মং জ নু এনএলডি সুচিকে চিঠি লিখেছিল-

“প্রিয় নেত্রী, আপনি দয়া করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ান। আপনার পিতা জেনারেল অং সান ১৯৪৬ সালে আরাকান সফর করেছিলেন। ওই সময় তিনি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে আপনারা  (রোহিঙ্গা) সহযোগিতা দিন। আমি আপনাদের ব্ল্যাঙ্ক চেক দেবো।” (https://goo.gl/YWTxE3)

অর্থাৎ ‘নেত্রী’ সুচিও ভোল পাল্টে বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে, এটা বুঝতে বুঝতেই রোহিঙ্গাদের অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। কাফিরদের এই দিক পরিবর্তনের বিষয়টি আঁচ করতেই মুসলমানদের অনেক দেরী হয়ে যায়, কারণ তাদের মন থেকে প্রতিবেশী হিসেবে, বন্ধু হিসেবে বিধর্মীদের ইমেজটি সহজে মুছে যেতে চায় না। বিপরীতে বিধর্মীরা আগের দিন মুসলমানের সাথে গলাগলি করে পরের দিনই তার গলায় ছুরি চালাতে পারে।

রোহিঙ্গাদের পরিণতি দেখে উপরের শিক্ষাটি যদি বাঙালি মুসলমানরা নিতে না পারে, তাহলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাদের সব মায়াকান্নাই বৃথা যাবে। বুদ্ধিমান পাঠকেরা বুঝে গিয়েছেন যে, আমি কোন দিকে ইঙ্গিত করছি।  চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় যীশু চৌধুরী বলেছিল, পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানকে হত্যা করতে হবে। নোয়াখালির নয়ন সাহা ফেসবুকে লিখেছিল, হযরত শাহজালাল ৩৬০ জন ডাকাত নিয়ে এসেছিলেন। চন্দ্রঘোনার প্রতীক ভট্টাচার্য একের পর এক ইসলামবিরোধী স্ট্যাটাস দেয়ায় যখন তার বাসায় স্থানীয় মুসলমানরা খোঁজ নিতে যায়, তখন সে ফেসবুকে লেখে, এই কাটা বাড়ার মাদারচুদগুলো তো আমার কিছুই করতে পারবে না।

তারপরও কিন্তু এদেশের মুসলমানরা হিন্দুদের ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ। কারণ তাদের মন থেকে এখনো মুছে যায়নি বন্ধু হিসেবে, প্রতিবেশী হিসেবে হিন্দুদের ইমেজগুলো। ফিলিস্তিনি ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের পথেই যেখানে বাঙালি মুসলমানরা অগ্রসর হচ্ছে, সেখানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য মায়াকান্না কাঁদাটা বৃথা। পবিত্র কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ, আপনারা আপনাদের নিকটবর্তী কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং কঠোর হউন।” ( সূরা তওবা, আয়াত শরীফ ১২৩) অর্থাৎ দূরবর্তী নয়, নিকটবর্তী কাফিরদের হত্যা করাটাই প্রকৃত জিহাদ। হযরত সাহাবায়ে কিরামগণ নিজেদের আপন ভাই ও পিতাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে পেরেছিলেন বিধায় আজ আমরা দ্বীন ইসলাম লাভে সক্ষম হয়েছি।

সেখানে হিন্দুরা আমাদের কী হয়? বন্ধু হয়? প্রতিবেশী হয়? আসলে শত্রু ব্যতীত কিছুই হয় না। বাংলাদেশী মুসলমানরা দূরবর্তী কাশ্মীর, ফিলিস্তিনের মুসলমানদের অবস্থা দেখে আবেগে বিচলিত হয়, ইহুদী-বর্মিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চায়। কিন্তু পাশের বাসায় থাকা ইসলামবিদ্বেষী স্ট্যাটাস দেয়া হিন্দুটির টিকিও ছিঁড়তে চায় না। রোহিঙ্গাদের জন্য মায়াকান্না কাঁদার আগে এদেশের মুসলমানদের জানা দরকার, সম্প্রতি রোহিঙ্গা হত্যায় উস্কানী দিতে মিয়ানমারে যে ভারতের নরেন্দ্র মোদি গিয়েছে, তার সফরসঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশী হিন্দু নেতারাও। হিন্দু মহাজোটের নেতা গোবিন্দ প্রামাণিক তার স্ট্যাটাসে লিখেছে, “হিন্দু মহাজোটের যুগ্ম মহাসচিব সমেন সাহা বার্মায় ভারতের মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ভিআইপি ক্যাটাগরিতে সফর সঙ্গী হিসেবে আমন্ত্রীত হয়ে এখন বার্মায় অবস্থান করছে”। (https://archive.is/aRJqo, https://archive.is/YJtdR)

তো মোদির সফরসঙ্গী হিসেবে সমেন সাহা বার্মায় গিয়ে সে কি করছে? সোজা উত্তর, রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যায় উস্কানী দিচ্ছে। এই সমেন সাহা কিংবা গোবিন্দ প্রামাণিক, কারো একটা চুলও ছেঁড়া হবে না, আর বাঙালি মুসলমানরা কিনা মিয়ানমারে গিয়ে যুদ্ধ করবে! শুনলে তো কুত্তায়ও হাসবে।

সুতরাং বর্ডার ক্রস করে মিয়ানমার যাওয়ার আগে পারলে বাঙালি মুসলমানরা রোহিঙ্গা হত্যায় উস্কানীদাতা একটি হিন্দুর মরামুখও নিশ্চিত করে দেখাক। সেটিও যদি করতে না পারে, তাহলে নিজেদের মা বোনকে নমশূদ্র হিন্দুদের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত করুক। অযথা রোহিঙ্গাদের জন্য জিহাদ করার ঘোষণা দিয়ে লোক হাসানোর কোন মানে হয় না।

Post a Comment

 
Top