এদেশের নাস্তিক্যবাদীরা অন্যতম আইকন হলো জাফর ইকবাল। তার গণিত অলিম্পিয়াড ও অন্যান্য কার্যক্রমকে এমনভাবে শিশুদের সামনে উপস্থাপন করা হয়, যেন শিশুরা মনে করে এই জাফর ইকবালের চামচামি করলেই তারা বিজ্ঞানী-গণিতবিদ হয়ে যেতে পারবে। কিন্তু জাফর ইকবালেরা যা করেছে, তা হলো আগায় পানি দিয়ে সবার অগোচরে গোড়াটা কেটে নেয়া।

স্কুল-কলেজের কিছু কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো পুরোটাই গণিতনির্ভর। যেমন পদার্থবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ইত্যাদি। পদার্থবিজ্ঞান পুরোটাই উচ্চতর গণিতনির্ভর একটি সাবজেক্ট, যে কারণে ৯ম-১০ম শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞান মানেই গাণিতিক অনুশীলন। বিগত সময়ের শিক্ষাব্যবস্থায় পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়, যেমন কাজ ও শক্তি, তরঙ্গ ও শব্দ এগুলোর শেষে অনুশীলনীতে অন্যান্য লিখিত প্রশ্নের সাথে গণিতের সমস্যার একটি আলাদা পার্ট থাকতো। সায়েন্সের ছাত্রদের একটি অন্যতম কাজই হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞানের সেসব গণিতের সমস্যা সলভ করা।

কয়েকদিন আগে টিউশনির সাথে জড়িত বুয়েটের এক ছোট ভাই, পদার্থবিজ্ঞানের এখন যে বইটি মাধ্যমিক লেভেলে পড়ানো হয় তা আমাকে দেখানোর জন্য নিয়ে আসল। ক্লাস নাইন-টেন শেষ করেছি অনেক আগে, কিন্তু বইটির অবস্থা দেখে আমার চোখ কপালে উঠল। খোদ পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের প্রাণ যেই গাণিতিক সমস্যার অনুশীলন, সেগুলো সব তুলে দিয়ে বইটিকে অপদার্থবিজ্ঞানের বইতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বইটি পড়ে যা দেখলাম-

১) আগে প্রত্যেকটি অধ্যায়ের শেষে কমপক্ষে দশটি অঙ্কের সমস্যা থাকত, বর্তমানে ‘সৃজনশীল প্রশ্ন’ এর নাম দিয়ে কেবল একটি গাণিতিক সমস্যা প্রত্যেকটি অধ্যায়ের শেষে নামকাওয়াস্তে দেয়া হয়েছে। এর ফলে যা হবে, শিক্ষার্থীরা পদার্থবিজ্ঞানের কিছুই মূলত শিখবে না।

২) বর্তমানে মাধ্যমিকের পদার্থবিজ্ঞানের বইটি আগের চেয়ে অনেক ছোট। আগের বইটি ছিল ৩৫০ পৃষ্ঠার, বর্তমানে মৌলিক অনেকগুলো বিষয় বাদ দিয়ে  তা ২৫০ পৃষ্ঠায় আনা হয়েছে। আগের বইতে ২৫টি অধ্যায় ছিল, বর্তমানে মাত্র ১৪টি অধ্যায় রয়েছে। আগের বইটি ছিল সুশৃঙ্খল, বর্তমান বইটি একেবারেই আগোছালো।

৩) আগের বইয়ের শুরুতে ‘ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশ’ অধ্যায় ‘মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান’ নিয়ে এক পৃষ্ঠার বর্ণনা ছিল। বর্তমানে টাকলা নাহিদের শিক্ষাব্যবস্থায় তা বাদ দেয়া হয়েছে। 

৪) আগের পদার্থবিজ্ঞানের বইতে ‘মহাকর্ষ এবং অভিকর্ষ’ নামে একটি আলাদা অধ্যায় ছিল, যা পদার্থবিজ্ঞানের একদম মৌলিক তত্ত্বের একটি। যারা সায়েন্সে পড়েছে, তাদের নিশ্চয়ই F=G(m1m2)/d^2 সূত্রটি মনে পড়বে। দুটো বস্তুর পারষ্পরিক গ্র্যাভিটেশনাল আকর্ষণের সূত্র এটি, যার উপর পদার্থবিজ্ঞানের একটা বড় অংশই দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমান বইতে এই সূত্রটি একেবারেই বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে! এবার চিন্তা করুন, এই টাকলা-জাফ্রিকবালিয় শিক্ষাব্যবস্থায় এদেশের শিক্ষার্থীরা কি বিজ্ঞানশিক্ষা লাভ করছে?

অাশ্চর্যের বিষয়, দেশের কোন শিক্ষাবিদ এ নিয়ে টু শব্দটিও করেনি। আওয়ামী লীগের শাসনব্যবস্থায় এদেশের মানুষ কতোটা নতজানু ও নপুংসক হয়েছে, তারই প্রমাণ এটি। এই জাফ্রিকবাল-টাকলা নাহিদেরা মূলত বিদেশী অমুসলিম দেশগুলোর নিয়োজিত বিশেষ এজেন্ট, যাদেরকে বসানোই হয়েছে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে জাতিকে অথর্ব করতে। বাংলাদেশের বিজ্ঞানশিক্ষার যে ক্ষতি জাফর ইকবালরা করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে, তা যেন সাধারণ মুসলমানদের চোখে না পড়ে, সেজন্য বিভিন্ন গণিত অলিম্পিয়াডের আড়ালে তাদের মূল চেহারাকে ঢেকে রাখা হচ্ছে।

পাশ্ববর্তী দেশের রোহিঙ্গাদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানদেরও অশিক্ষিত জাতিতে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এই জাফ্রিকবাল-টাকলা নাহিদেরা। বর্তমানে এদেশের মানুষ তাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজে পাঠাচ্ছে, কিন্তু তারা কিছুই শিখছে না। এই অশিক্ষার বিষয়টি গোপন থাকে না, যখন ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া ছাত্ররাই ৯৮ শতাংশ ফেল হয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক, কারণ স্কুল কলেজে কিছুই যে তারা শিখে আসেনি। জাফর ইকবালরা যেই ক্ষতি এদেশের করেছে, তা তাকে হাজারবার মৃত্যুদণ্ড দিলেও প্রায়শ্চিত্ত হবে না।

Post a Comment

 
Top