২০০৯ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের রাজনৈতিক মোর্চা ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’ এর এক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিল হিন্দু ধর্মগুরু রামদেব, যে বর্তমানে বিজেপির প্রধান মুখপাত্রদের একজন। রামদেবের মতো হিন্দু সন্ন্যাসী এসে দেওবন্দের ছাত্র-শিক্ষকের প্রধান অতিথির আসনে বসায় তারা এতোটা আবেগাপ্লুত হয়েছিল যে, রামদেব স্টেজে দাঁড়িয়ে মুসলমানদের নামাযের সাথে হিন্দুদের যোগসাধনার তুলনা করতেও দ্বিধা করেনি! বলা বাহুল্য, তখন দেওবন্দ থেকে এধরণের ইসলামবিরোধী বক্তব্যের কোন প্রতিবাদও করা হয়নি।

যে কারণে ইন্ডিয়াটুডেতে রামদেবের দেওবন্দ গমন নিয়ে তখন রিপোর্ট হয়েছিল Saffron was a bigger hit than khadi অর্থাৎ ‘স্যাফরন’ বা গেরুয়া বসনের স্থান খাদির উপরে উঠেছিল। (https://goo.gl/4y5fJY) যেহেতু রামদেবের গায়ে ছিল গেরুয়া পোষাক আর দেওবন্দের ছাত্র-শিক্ষকের গায়ে ছিল খদ্দরের পোষাক। উল্লেখ্য, দেওবন্দের ট্রেডমার্ক হিসেবে খাদি বা খদ্দরের পোষাকের সূচনা হয়েছে গান্ধীর সময় থেকে। সেই কবে ব্রিটিশ আমলে গান্ধী চরকায় সুতা কেটে খাদির পোষাক তৈরী করে পরার আহবান জানিয়েছিল, তখন থেকেই গান্ধীর অনুগত হিসেবে দেওবন্দীরা খদ্দরের পোষাক পরে আসছে। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও দেওবন্দীদের গা থেকে খদ্দরের পোষাক নামেনি, যা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়।

গান্ধীর জীবনী নিয়ে ব্রিটিশ লেখক জোসেফ লেলিভেল্ডের ‘গ্রেট সোল’ নামে একটি বই রয়েছে। বইটির একটি পৃষ্ঠায় খিলাফত আন্দোলনের নেতা মুহম্মদ আলীর সাথে গান্ধীর একটি ছবি রয়েছে, যেখানে মুহম্মদ আলীর গায়ে ছিল খদ্দরের পোষাক। লেখক জোসেফ লেলিভেল্ড আক্ষেপ করে তার বইতে লিখেছিল, এই মুহম্মদ আলী একজন ইসলামী শিক্ষায় পারদর্শী আলেম, সে তার অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে খদ্দরের পোষাক তার গায়ে চাপাল, যা ছিল তখনকার দিনে গোঁড়া হিন্দুদের পোষাক। উল্লেখ্য, খিলাফত আন্দোলনের সময়ে গান্ধীর সাথে দেওবন্দের ন্যায় ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগসূত্র স্থাপিত হয়। গান্ধী কেন হিন্দু হয়ে মুসলমানদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছে, তার উত্তরে সে বলেছিল, এর দ্বারা আমি মুসলমানদের ছুরি থেকে গোমাতাকে রক্ষা করতে পারব। (সূত্র: ভারত কি করে ভাগ হলো, বিমলানন্দ শাসমল)

খদ্দরের পোষাক চাপানো তো রয়েছেই, কিন্তু দেওবন্দ সংশ্লিষ্টদের গান্ধী আনুগত্যের  সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো ভারতে গরু জবাই নিরুৎসাহিত ও পর্যায়ক্রমে নিষিদ্ধ করা। গান্ধীর আদর্শ মেনে দেওবন্দীরা তখন থেকেই প্রতি বছর ঈদুল আযহার সময়ে গরু কুরবানীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়ে আসছে। ভারতের আইবিএন নিউজ এজেন্সীতে দারুল উলুম দেওবন্দের এক মুখপাত্র জানায়- बकौल अशरफ उस्मानी दारूल उलूम हमेशा से ही गौहत्या के खिलाफ रहा है और समय समय पर इसके बारे में फतवे भी जारी किए गए हैं। सबसे पहला फतवा स्वतंत्रता आंदोलन के दौरान महात्मा गांधी के अनुरोध पर दारूल उलूम द्वारा जारी किया गया था।

অর্থ: দারুল উলুম দেওবন্দ সর্বদা গরু কুরবানীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং প্রতিবছর গরু কুরবানীর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে আসছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে গান্ধীর নির্দেশ অনুযায়ী সর্বপ্রথম দেওবন্দ থেকে গরু কুরবানীর বিরুদ্ধে ফতওয়া জারি করা হয়েছিল। (ওয়েবসূত্র: http://khabar.ibnlive.in.com/news/109892/13)

উল্লেখ্য, গরু কুরবানী করাটা খাস সুন্নত। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের তরফ থেকে নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জের সময়ে গরু কুরবানী করেছিলেন। কিন্তু নবীজীর সুন্নতের কোন গুরুত্ব দেওবন্দীদের কাছে নেই, তাদের কাছে রয়েছে গান্ধীর সুন্নতের গুরুত্ব। গান্ধীর আদর্শ তাদের কাছে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও তারা খদ্দরের পোষাক পরে, গরু জবাইয়ের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়। (https://goo.gl/3tirn6)

যে কারণ কওমি মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক, বর্তমানে স্বঘোষিত নাস্তিক ‘আবদুল্লাহ আল মাসুদ’ তার একটি পোস্টে বারবার গান্ধীর প্রশংসা করেছে। গান্ধীর বিভিন্ন কোটেশন তুলে ধরেছে ইসলামকে হেয় করার জন্য। গান্ধীর জীবনী নিয়ে আপ্লুত হয়েছে। সরাসরি ঘোষণা দিয়েছে যে, “তোমার নবীর চেয়ে গান্ধী ভালো”। (https://goo.gl/BNb4rD)

আসলে ধর্মত্যাগী “আবদুল্লাহ আল মাসুদ”কে দোষ দেয়ার আগে তার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাকগ্রাউন্ডের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাটহাজারী কওমি মাদ্রাসার গা ঘেঁষেই রয়েছে সীতাকালী মন্দির। ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এর এক রিপোর্টে এই মন্দিরকে নিয়ে হাটহাজারীর ছাত্র-শিক্ষকেরা যে আবেগের বহর দেখিয়েছে, মন্দিরের সীতাকালী দেবীকে যেভাবে শ্রদ্ধাভরে ‘মা’ ডেকেছে, তা অনায়াসে যে কোন গোঁড়া হিন্দু পূজারীকে অতিক্রম করে যায়। (https://goo.gl/svhnkU)

একারণেই কওমি মুরতাদ আবদুল্লাহ মাসুদ বলতে দ্বিধা করেনি, নবীর চেয়ে গান্ধী ভালো।

Post a Comment

 
Top