ভারতের উত্তরাঞ্চল ইতিহাসের একটি বিচিত্র নজির, যেই স্থানকে কেন্দ্র করে শত শত বছর ধরে মুসলিমরা গোটা ভারতবর্ষ শাসন করেছে। অতীতে মুসলিম শাসনামলের দিল্লী, আগ্রা এসব শহরগুলো উত্তরপ্রদেশেই অবস্থিত, যে কারণে ঐ অঞ্চলের হিন্দুরাও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে মুসলমানদের অনুগামী ছিল। জহরলাল নেহরুর ভাইঝি লেখিকা নয়নতারা সেহগাল তার ভাষণে বলেছিল, “উত্তর ভারতের মানুষ হিসেবে আমি সংস্কৃতিগতভাবে নিজেকে আধা মুসলমান মনে করি।” সেই উত্তরপ্রদেশেই আজ মুসলমানরা সর্বাধিক নির্যাতনের শিকার, একারণেই তাকে আমি বলেছি ‘ইতিহাসের বিচিত্র নজির’। এর ‍মূল কারণ হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের মুসলমানদের মাত্রাতিরিক্ত হিন্দুপ্রীতি। (https://goo.gl/wQo51e)

ঐ উত্তরপ্রদেশের ন্যায় পরিণতি বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলটির ভাগ্যেও ঘটতে যাচ্ছে। আপনারা জানেন যে, সিলেটে সম্প্রতি আবদুল আজিজ নামক এক নওমুসলিমকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার ওসি তার সম্পর্কে বলেছে, “আজিজ একটা ড্যাঞ্জারাস (বিপদজনক) লোক, কত মুসলমান আছে কেউ বাড়াবাড়ী করেনা; সে এত মুসলমান বানাতে যায় কেন? তার ভালোর জন্য আটকে রেখেছি না হলে বাকি হিন্দুরা তাকে কিডনাপ করে মেরে ফেলবে। তার জন্য জেলখানাই নিরাপদ।” অর্থাৎ সিলেট বাংলাদেশের মধ্যে এমন একটি জায়গা, যেখানে হিন্দুদের কাছ থেকে বাঁচানোর জন্য নওমুসলিম আবদুল আজিজকে জেলে পুরে রাখতে হবে! প্রশ্ন হতে পারে, সিলেটের মুসলমানরা নিজেদেরকে ‘শাহজালালের উত্তরসূরী’ দাবি করার পরও কি কারণে সেখানে হিন্দুদের এতো দাপট? থানার ওসি তো বলেছেই “সে এত মুসলমান বানাতে যায় কেন?”

অর্থাৎ সংবিধান স্বীকৃত অধিকার হলেও সিলেটের মাটিতে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া যেন বিরাট অপরাধ! এদেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও নাস্তিকদের বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট আমরা অবলোকন করেছি। যেমন গ্রিক মূর্তি প্রজেক্ট, শ্যামলকান্তি প্রজেক্ট, অরুণ গুহ প্রজেক্ট, রাগিব আলী প্রজেক্ট ইত্যাদি। কোন প্রজেক্টেই হিন্দু ও নাস্তিকেরা সফলতা লাভ করেনি, কেবল রাগিব আলী প্রজেক্টটি বাদে। কারণ এই প্রজেক্টটা সফল করার কাজটি করেছে সিলেটের মুসলমানরাই তাদের মাত্রাতিরিক্ত হিন্দুপ্রীতির কারণে। (https://goo.gl/6a61K6)

নওমুসলিম আবদুল আজিজকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে ভরেছে সিলেটেই বসবাসরত এক উগ্র হিন্দু নেতা রাকেশ রায়। সেই রাকেশ রায়ের আইডিতে দেখলাম, সে নারী দিবসে সিলেটের শহীদ মিনারের সামনে ‘লাভ জিহাদ’ এর বিরুদ্ধে একটি মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনের ব্যানারে সরাসরি লেখা রয়েছে, লাভ জিহাদ প্রতিহত করুন। (https://goo.gl/xzVa84) আমরা জানি যে, ‘লাভ জিহাদ’ হচ্ছে উগ্র হিন্দুদের চরম ইসলামবিরোধী অপপ্রচারের একটি অংশ। জিহাদ দ্বীন ইসলামের একটি পবিত্র অনুষঙ্গ, তাকে অপমান করে সিলেটের শহীদ মিনারে প্রকাশ্যে মানববন্ধন করে হিন্দুরা, অথচ কিছুই হয় না। কারণ সিলেটের মুসলমানদের মাত্রাতিরিক্ত হিন্দুপ্রীতি।

 এই সিলেটেই ইসলামবিরোধী ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে মিছিল করেছিল গণজাগরণ মঞ্চ, কারণ তারা জানে সিলেটের হিন্দুপ্রেমিক মুসলিম জনগোষ্ঠী তাদের একটা চুলও বাঁকা করার ক্ষমতা রাখে না। তুলনা করেছিলাম উত্তরপ্রদেশের মুসলমানদের সাথে সিলেটের মুসলমানদের। হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি সিলেটে আগমন করেছিলেন উত্তরভারত থেকেই। দিল্লী-আগ্রা তথা ভারতের মুসলমানদের মূল কেন্দ্রগুলো উত্তরপ্রদেশে হওয়ার কারণে বড় বড় সূফী দরবেশদের বিচরণ সেখানেই ছিল। সেই উত্তরপ্রদেশেই আজ মুসলমানরা তাদের হিন্দুতোষণের প্রায়শ্চিত্ত করছে। সুতরাং সিলেটের মুসলমানরা যেন মনে না করে যে, ‘শাহজালালের উত্তরসূরী’ দাবিদার হওয়ার কারণেই তারা হিন্দুতোষণ করে পার পেয়ে যাবে। বরং সিলেট যে মাত্রাতিরিক্ত হিন্দুতোষণের কারণে উত্তরপ্রদেশের ন্যায় মুসলিম বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাচ্ছে, তা বোঝা যায় আবদুল আজিজের গ্রেফতারের ঘটনা দেখলে।

Post a Comment

 
Top