বর্তমানে বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় আসীন রয়েছে এককভাবে যে রাজ্যটির কারণে, তা হলো উত্তরপ্রদেশ। বিগত ভারতীয় নির্বাচনের সময়ে উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরে দাঙ্গা করে মোদির ডানহাতে পরিণত হয় অমিত শাহ, পরবর্তীতে তার কারণেই মোদির জয় নিশ্চিত হয়। আর সাম্প্রতিককালে যোগী আদিত্যনাথকে মূর্খমন্ত্রী করার কথা তো সবাই জানে। কিভাবে উত্তরপ্রদেশ পরিণত হলো উগ্র হিন্দুত্ববাদের ঘাঁটিতে? এর মূল কারণ উত্তরভারতের মুসলমানদের হিন্দুতোষণ। যখন ভারতে মনমোহন সিংয়ের অধীনে কংগ্রেস সরকার ছিল, তখন প্রতিবছর কোরবানী আসলেই উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ফতোয়া দেয়া হতো যে, গরু হিন্দুদের দেবতা বিধায় আপনারা ঈদে গরু কুরবানী করবেন না। (https://goo.gl/dcyWbk, https://goo.gl/71MjNa, https://goo.gl/e2clYv)

অতীতে এভাবে প্রতিবছর গরু কুরবানীর বিরুদ্ধে দেওবন্দ থেকে ফতোয়া দেয়ার কারণেই বর্তমানে উত্তরপ্রদেশে গরুর গোশতের জন্য মুসলমান পিটিয়ে মারে হিন্দুরা, সেই সাহস মুসলমানরাই কিন্তু দিয়েছে। ভারতীয় হিন্দুতোষক মুসলমানরা যুক্তি দিয়েছে, গরুর বদলে অন্য প্রাণীর গোশত খেলেই তো হল। যোগী আদিত্যনাথ মূর্খমন্ত্রী হওয়ার পর তাদের ‘অন্য প্রাণী’র গোশত খাওয়াটাও বন্ধ হয়েছে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। সবচেয়ে বড় কথা, রামদেব, রবিশঙ্করের মতো কিছু হিন্দু সন্ন্যাসী, যাদেরকে প্রতিবছর দেওবন্দ মাদ্রাসার বার্ষিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করে আনা হত, তারাই পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়ে মোদির পক্ষে প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। রবিশঙ্কর তো ট্রাম্পের পক্ষেও প্রচার চালিয়েছিল আমেরিকায় গিয়ে। অর্থাৎ দেওবন্দ তথা উত্তরভারতীয় মুসলমানদের হিন্দুতোষণের ফলাফল শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, তা আমেরিকা পর্যন্তও পৌঁছে গিয়েছে।


এতগুলো কথা এই কারণে বললাম যে, আমার আগের একটি পোস্টে (লিঙ্ক: https://goo.gl/a6aToc) পশ্চিমবঙ্গের মাথামোটা মুসলমানরা বরকতিকে জোরপূর্বক আহত করে মসজিদ থেকে বের করে দেয়ার পক্ষে এই সাফাই গাইছে যে, বরকতি উগ্র হিন্দুদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নাকি পশ্চিমবঙ্গে উগ্র হিন্দুদের হাতে দাঙ্গার ইস্যু তুলে দিচ্ছে! কিন্তু উত্তরপ্রদেশের উদাহরণ থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, হিন্দুবিরোধিতা নয় বরং হিন্দুদের তোষণ করাটাই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উগ্র হিন্দুদের উত্থান নিশ্চিত করে। ভারতের সব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর আমি মুসলমান মহিলাদের একই সাক্ষাৎকার শুনি, “আমি আমার পাশের বাসার হিন্দুটিকে চাচা বলে ডাকতাম, বেটা বলে ডাকতাম। সে আমাকে রেপ করল, সে আমার ছেলেকে মারল।”

এরদ্বারা বোঝা যায় যে, ভারতের প্রত্যেকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগে উক্ত এলাকায় মুসলমান আর হিন্দুদের মধ্যে রীতিমতো দহরম-মহরম বিরাজ করে। এর ফলেই মুসলমানদের অসতর্ক মুহূর্তে হিন্দুরা কোপ দেয়ার সুযোগটি পায়। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গে যারা প্রতিবাদী রয়েছে সানাউল্লাহ খান কিংবা ইমাম বরকতির মতো, তাদেরকে প্রথমে কায়দা করে সরিয়ে দেবে হিন্দুত্ববাদীরা। এরপর পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা যখন অছাম্প্রদায়িকতার সুখের সাগরে ভাসতে থাকবে, তখনই হিন্দুরা তাদের মোক্ষম আঘাতটি করবে। বরকতিকে সরিয়ে দেয়া নিয়ে আমার আগের পোস্টটিতে হিন্দুরা বারবার সাফাই গাচ্ছিল, বরকতির বিরুদ্ধে সভা করে তাকে সরিয়েছে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী নামক এক ধর্মীয় নেতা, সুতরাং এখানে হিন্দুদের কোন দায় নেই। তা কে এই সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী? তার সম্পর্কে ইন্টারনেটে দেখলাম, সে হলো ভারতীয় দেওবন্দীদের রাজনৈতিক সংগঠন ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’ এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান। (https://goo.gl/fv6bY2)

 অর্থাৎ বুঝছেনই পাঠকেরা, কিভাবে দুয়ে দুয়ে চার মিলে গেল। দেওবন্দীরা যেভাবে হিন্দুতোষণ করে উত্তরপ্রদেশকে মুসলমানদের বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে, অদূর ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও তারা একইরূপ করতে যাচ্ছে। খোদ বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। এদেশে যখন হিন্দুদের বড় বড় চাকরি দেয়া শুরু করল আওয়ামী সরকার, তখনই তারা বড় গলায় বলা শুরু করল যে, তাদেরকে নাকি নির্যাতন করা হচ্ছে। ইদানিং বাংলাদেশী হিন্দুরা ফেসবুকে ত্রিশূলের ছবি দিয়ে মুসলমানদের বিঁধে দেয়ারও হুমকি দিচ্ছে। অর্থাৎ হিন্দুতোষণই হিন্দু কর্তৃক মুসলিম নির্যাতন ডেকে আনে, এটি প্রকৃতির অমোঘ সত্য। বিশেষ করে আমি বারবার বলি যে, বর্তমানে এদেশে মুসলমানরা যে আওয়ামী অপশাসনে অতিষ্ট হচ্ছে, তা তাদের বিগত দিনের হিন্দুতোষণের প্রায়শ্চিত্ত ছাড়া কিছু নয়। এই বিষয়গুলো না বুঝলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের অবস্থাও গুজরাট কিংবা উত্তরপ্রদেশের মতো হবে, এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

Post a Comment

 
Top