গান্ধীর আত্মজীবনীর শিরোনাম হলো ‘দি স্টোরি অফ মাই এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথ’ বা ‘সত্যকে নিয়ে আমার পরীক্ষার গল্প’। আক্ষরিক অর্থে শিরোনামটি দেখে গান্ধীকে অনেকের মহান ব্যক্তি বলে মনে হতে পারে, কারণ সে নাকি সারাজীবন ‘সত্য নিয়ে পরীক্ষা’ করে কাটিয়েছে। কিন্তু তার পরীক্ষার ধরণ কি ছিল, সেটা আসলে অধিকাংশ লোকই জানে না। গান্ধী তার আত্মজীবনীর শুরুতেই স্বীকার করেছে যে, সে ছোটবেলা থেকেই ভীষণ কামাতুর ছিল। তার পিতা যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন সে তার পিতার পাশে না থেকে স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত ছিল। এ কারণে কামপ্রবৃত্তি দমনের নামে গান্ধী তার জীবনের শেষদিকে বিকৃতাচারে লিপ্ত হয়। সে প্রতিরাতে নগ্ন মহিলার সাথে শয়ন করত। তার শয্যাসঙ্গীর মধ্যে ছিল তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক সুশীলা নায়ার থেকে শুরু করে তার নাতনী মনু পর্যন্ত।
তার বক্তব্য ছিল, মহিলা মানুষের সাথে অবাধ নগ্নতার মাধ্যমে সে কামকে জয় করতে শিখবে।তার এই বিকৃতাচারের কারণে কংগ্রেসের অনেক নেতা তার সাথে দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ করে দেয়। অনেকেই আপত্তি প্রকাশ করে। গান্ধী তখন রেগে বলত, “তোমরা আমাকে আমার পরীক্ষা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।” অর্থাৎ যৌনতা দমনের নামে গান্ধী যে পরীক্ষা চালিয়েছিল, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিকৃত যৌন কামনা চরিতার্থ করা। ঠিক সেভাবেই ভারত রাষ্ট্রে অসাম্প্রদায়িকতা স্থাপনের পরীক্ষা চলে, যার মূল উদ্দেশ্য হিন্দুদের সাম্প্রদায়িকতা চরিতার্থ করা। ভারতীয় বিভিন্ন টিভি-সিনেমার গল্প ও রাজনীতিকদের কর্মকাণ্ড দেখলেই বিষয়টি বোঝা যায়। ভারতীয় হিন্দুরা বারবার দাবি করে, তারা অসাম্প্রদায়িক অসাম্প্রদায়িক। এই অসাম্প্রদায়িকতা প্রমাণ করতে গিয়ে তারা সিনেমার কাহিনীতে হিন্দু ছেলের সাথে মুসলিম মেয়ের মেলামেশা দেখায় (উল্টোটা দেখালে আবার সিনেমা হলে হামলা হয়)। প্রেসিডেন্টের ন্যায় বিভিন্ন ক্ষমতাহীন রাষ্ট্রীয় পদে মুসলমান নিয়োগ দেয়। হিন্দুর অনুষ্ঠানে মুসলমানকে যেতে উৎসাহিত করে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতা Sanaullah Khan এর একটি পোস্টে দেখেছি রাখীবন্ধন অনুষ্ঠানকে প্রমোট করতে। তার ওয়ালে বোরখাপরা মেয়েদেরকে দিয়ে হিন্দু বেটাদের হাতে রাখী বেঁধে দেয়ার ছবিও পোস্ট করা হয়েছে। কিন্তু এসবের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতা বাড়ার বদলে আসলে বৃদ্ধিই পেয়ে থাকে। কারণ মুসলমান মেয়েকে দিয়ে হিন্দুর হাতে রাখী বাঁধাটা স্বাভাবিক নয়, এটি আরোপিত। প্রেসিডেন্ট পদে মুসলমান বসানোটা হিন্দুদের স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছায় হয় না, বরং হিন্দুদের অসাম্প্রদায়িক মুখোশ রক্ষার্থে তারা বাধ্য হয়ে এটি করে থাকে।

এসব আরোপিত কর্মকাণ্ডের দ্বারা ঐক্যের বদলে বিভাজনটিই বারবার স্পষ্ট হয়। বাংলাদেশ-পাকিস্তানে যেটি হয়েছে, তা হলো আমরা মুসলমান-হিন্দুর স্বাভাবিক যে বৈরিতা ও পার্থক্য, তা মেনে নিয়ে আলাদা হয়েছি। আমরা ক্ষতটাকে খুঁচিয়ে বাড়তে দেইনি, বরং তাকে আলাদা রেখেছি। যে কারণে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় না। কিন্তু ভারতে অসাম্প্রদায়িক অসাম্প্রদায়িক জপার মাধ্যমে আসলে সাম্প্রদায়িকতার ক্ষতকেই বারবার খুঁচিয়ে সজীব রাখা হয়, কারণ তা না হলে ভারতীয় রাজনীতির ধারাই বন্ধ হয়ে যাবে। খোঁচাতে খোঁচাতে এই ক্ষত এখন ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে।
ভারতীয় মুসলমানরা মনে করে থাকে যে, তারা সাতচল্লিশে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ভারতে প্রবেশ করেছে। আসলে তারা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে প্রবেশ করেনি, তারা প্রবেশ করেছে গান্ধী নির্মিত অসাম্প্রদায়িকতার পরীক্ষাগারে। ভারতীয় মুসলমানরা ঐ পরীক্ষাগারের গিনিপিগ মাত্র, যেসব গিনিপিগের উপর হিন্দুরা অসাম্প্রদায়িকতার পরীক্ষা চালায়। আর দশটা পরীক্ষার মতোই অসাম্প্রদায়িকতার পরীক্ষাগারের সাইড ইফেক্ট হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, এবং অন্যান্য পরীক্ষার মতোই ভারতীয় মুসলমান গিনিপিগগুলো সেই সাইড ইফেক্টে মারা যায়।

Post a Comment

 
Top