কিছু হলেই উপরের টার্মটি অনেকে ব্যবহার করে, আমরা ‘গরু খাওয়া মুসলমান’। তবে আমি কথাটি মানতে রাজি নই। উপমহাদেশের মুসলমানরা যদি সত্যিকার অর্থে ‘গরু খাওয়া মুসলমান’ হতোই, তাহলে হিন্দুত্ববাদের উত্থানটা এভাবে হতো না। কয়েকদিন আগে ভারতের মেঘালয়ে কয়েকজন বিজেপি নেতার দলত্যাগ করা নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছিল “বিজেপি ছাড়ল, গরুর গোশত ছাড়ল না”। মেঘালয়ের বিজেপি নেতারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রথমে বিচি-বিফ ফেস্ট করার পরিকল্পনা নেয়। তখন বিজেপির কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, তারা ঐ উৎসব করতে পারবে না। ব্যস, সাথে সাথে পদত্যাগ করে বিজেপির তিন নেতা বার্নাড মারাক, বাচু মারাক এবং উইলভার গ্রাহাম ডাংগো। বার্নার্ড মারাক জোর গলায় বলে, “বিজেপি উপজাতি ও খ্রিস্টানদের ওপর ‘হিন্দুত্ব’ চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। এরকম রাজনৈতিক দলের অংশ হয়ে থাকার কোনো মানে নেই, যারা আমাদের গারো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় না।”

(http://parstoday.com/bn/news/india-i39206) আশ্চর্যের বিষয়, গোটা বিশ্বে যেখানে মুসলমানরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে; সে তুলনায় এই গারোরা সংখ্যায় কত কম, কত নগণ্য জাতি তারা। তারপরও নিজেদের ‘স্বকীয়তা’ রক্ষার্থে কত সচেতনতা তাদের। যেখানে পয়সা ও ক্ষমতার জন্য রাজনীতিকরা বিরোধী দল থেকে সরকারি দলে যোগ দেয়, সেখানে গরুর গোশত খাওয়ার অধিকার তথা নিজ সংস্কৃতি রক্ষার জন্য গারো নেতারা ক্ষমতাসীন দলও ত্যাগ করেছে। বিপরীতে বাংলাদেশের বহু মফস্বল শহর আমি ঘুরেছি, যেখানে একটি রেস্টুরেন্টেও গরুর গোশত রাখা হয় না। খোদ ঢাকা শহরের টিকাটুলি, বংশাল, মতিঝিলের দিকেও মূল মূল রেস্টুরেন্টগুলোতে পাওয়া যায় না গরুর গোশত। এতেই প্রমাণ হয় যে, আমরা ‘গরু খাওয়া মুসলমান’ নই। মেঘালয়ের বিজেপি নেতারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে দলত্যাগ করে গরুর গোশত উৎসবের আয়োজন করেছে। শুধু মেঘালয় নয়, ভারতের কেরালা, তামিলনাড়ু সহ অনেক জায়গাতেই গরুর গোশত উৎসব করা হয়েছে বিজেপির বিরোধিতা করে। বিপরীতে এদেশে চারুকলায় গরুর গোশত ইস্যুতে ক্যান্টিন ভাঙচুর ও ক্যান্টিন মালিককে পেটানো হলেও এদেশের মুসলমানরা কিন্তু প্রতিবাদস্বরূপ কোন ‘বিফ ফেস্টিভ্যাল’ এর আয়োজন করেনি।

সুতরাং ‘গরু খাওয়া মুসলমান’ উপাধিটা এই ধ্বজভঙ্গ অসাম্প্রদায়িক জাতির ক্ষেত্রে খাটে না। মুসলমানরা গরুর গোশত নিয়ে আপোষের পথে হাঁটে বলেই তাদেরকে পিটিয়ে মারা হয়। বিপরীতে উপজাতিরা অতিক্ষুদ্র হয়েও গরুর গোশত নিয়ে কোন আপোষের পথে হাঁটে না, যে কারণে হিন্দুরা তাদের কাছে মাথানত করেছে। এমনকি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে আমন্ত্রণ জানাতে মিজোরামে গরুর গোশত উৎসবের আয়োজন করা হয়, আর সেও সেখানে হাজির হয়ে বলে “আপনারা যা খুশি, খেতে পারেন।” (https://goo.gl/Ag5YaD)

Post a Comment

 
Top