স্কুলজীবনের সমাজবিজ্ঞান বইতে সৈয়দ আহমদ খান, নওয়াব আবদুল লতিফ এদের নাম ও জীবনী সবারই পড়া হয়েছে। নওয়াব আবদুল লতিফ তার আত্মজীবনী নিজেই ইংরেজি ভাষায় লিখে গিয়েছিলেন, যার বাংলা অনুবাদ বাজারে পাওয়া যায় ‘মুসলিম বাঙ্গলা আমার যুগে’ নামে। সেই বইতে ব্রিটিশ কর্তৃক মুসলমান কাজীদের বরখাস্ত করার ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। ব্রিটিশ আমলের শুরুর দিকে ইংরেজরা মুসলিম আইন ব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা সবই বহাল রেখেছিল। ফারসী ভাষাতেই প্রশাসনিক কাজ পরিচালিত হত এবং শরীয়া আইন অনুসারে চলতো বিচারব্যবস্থা। শরীয়া আইনের কারণে ফৌজদারী আদালত পরিচালিত হতো মুসলিম কাজী ও মুফতিদের দ্বারা। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা এই ব্যবস্থা বন্ধ করতে চাইল, ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিম সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য এবং ব্রিটিশ অনুগত হিন্দুদেরকে বিচারব্যবস্থায় বহাল করার জন্য। নওয়াব আবদুল লতিফ তার বইতে লিখেছেন, “১৮৬৪ সালের ১১ নং আইন দ্বারা কাজীউল কুজ্জাত, মুসলিম ল (আইন) অফিসার এবং শহর ও মফস্বলের কাজীর পদ উঠিয়ে দেয়া হয়। এই বিধানের ফলে বহু শিক্ষিত মুসলমান কর্মচ্যুত হন। অনেকের রুজী রোজগারের একমাত্র অবলম্বন ছিল এই পেশা। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রের এই ক্ষতি ছাড়াও সমগ্র মুসলমান সমাজ এজন্য বিশেষভাবে অবলম্বনহীন হয়ে পড়ে।”

 নওয়াব আবদুল লতিফ ব্রিটিশ অনুগত ব্যক্তি হিসেবে এর সরাসরি প্রতিবাদ করেনি, বরং ব্রিটিশদের পরামর্শ দিল চাকরিচ্যুত কাজীদেরকে যেন ‘ম্যারিজ রেজিস্ট্রার’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার ভাষায় “যে সমস্ত লোক কাজীর পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন, তারা এর ফলে জীবিকা অর্জনের সুযোগ পেলেন।” যেই কাজীর রায়ে মানুষের মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হত, সেই কাজীকে নামিয়ে আনা হলো কেবল বিয়ে পড়ানো মৌলভীর ভূমিকায়! না বিয়ে পড়ানো কোন ছোটখাট বিষয় নয়, কারণ পাশ্চাত্যে খ্রিস্টান-ইহুদী এদের বিয়ে যারা পড়ায়, তারা তাদের সমাজের সর্বোচ্চ স্তরের ব্যক্তিই হয়ে থাকে। মুসলিম আইন ব্যবস্থাতেও কাজী অত্যন্ত সম্মানিত পদ ছিল, কারণ মুসলিম শাসনামলে কাজী যেমন বিয়ে পড়াত, ঠিক তেমনি বিচারের রায়ও প্রদান করত। ব্রিটিশ আমলে কাজীর হাত থেকে বিচারের দণ্ড কেড়ে নিয়ে কেবল বিয়ে পড়ানোর মধ্যে কাজীর ভূমিকা সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়। মুসলমানরা জানে না তাদের পূর্বপুরুষদের এই মর্মন্তুদ ইতিহাস। এ কারণেই আদালত চত্বরে গ্রীক মূর্তি বসিয়ে দাবি করা হয় যে, রোমানদের অনুকরণে নাকি এদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই দেশের সবাইকে এখন গ্রীক মূর্তিকে ন্যায়বিচারের প্রতীক মানতে হবে! অনেক ইসলামী সংগঠন এর প্রতিবাদ করেছে, কিন্তু কাউকেই দেখলাম না উপরের ইতিহাসগুলো তুলে এনে নাস্তিকদের দাবির মূল জায়গায় আঘাত করতে।

Post a Comment

 
Top