একটি দেশে ‘নির্দিষ্ট সম্প্রদায়’ বলতে কখনো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে বোঝায় না, বোঝায় সংখ্যালঘু অন্যান্য জনগোষ্ঠীকে। মুফতি সাখাওয়াত থেমিসের মূর্তি প্রসঙ্গে বলেছেন, কোন নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতীক অাদালত প্রাঙ্গনে থাকতে পারে না। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে সুলতানা চক্রবর্তী বলল, তাহলে আদালতে মসজিদও থাকতে পারবে না। পৃথিবীর যতগুলো অমুসলিম শাসিত দেশ রয়েছে, তারা সর্বদাই তাদের দেশের মুসলমানদের অধিকার হরণকে স্বাভাবিক বিষয় বলেই মনে করে থাকে। কারণ তারা মুসলমানদেরকে মানুষ বলেই মনে করে না। সুলতানা চক্রবর্তীও সেই একই গোষ্ঠীর, যে কারণে সে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ‘নির্দিষ্ট সম্প্রদায়’ এর সাথে এক করে দেখেছে। অথচ বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ মানেই মুসলমান এবং মুসলমান মানেই বাংলাদেশ।

‘নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী’ বলতে এখানে হিন্দুদেরকে বোঝানো হতে পারে, বৌদ্ধদেরকে বোঝানো হতে পারে, কিন্তু মুসলমানদেরকে নয়। মুসলমানদের এদেশে ‘নির্দিষ্ট’ করার কোন উপায় নেই। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মসজিদের মিনার তৈরীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বোরখার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ভারতে মুসলমানদের গরুর গোশত খাওয়া পর্যন্ত ব্যান করে দেয়া হয়েছে। তখন কিন্তু কেউ প্রশ্ন করে না যে, ইউরোপে মসজিদের মিনার তৈরীতে নিষেধ থাকলে চার্চের উপরে ক্রস থাকবে কেন? কিংবা ভারতে গরুর গোশত নিষেধ হলে শুকরের গোশত খাওয়া নিষেধ হবে না কেন? সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে এধরণের প্রশ্ন কেন উঠবে যে, থেমিস না থাকতে পারলে মসজিদ থাকতে পারবে কেন?

 এই প্রশ্ন উঠার একটা বড় কারণ হলো, ইউরোপ ও ভারতে খ্রিস্টান ও হিন্দুরা নিজেদেরকে যেভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে, সেভাবে বাংলাদেশের মুসলমানরা পারেনি। এদেশের মুসলমানরা সংখ্যায় বেশি হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, কারণ তাদের মনে রয়েছে ‘অসাম্প্রদায়িকতা’। সুলতানা চক্রবর্তীরা সাম্প্রদায়িক বলেই বলতে পেরেছে যে, মূর্তি না থাকলে মসজিদ থাকতে পারবে না। অন্যদিকে হেফাজতের প্রতিনিধি অসাম্প্রদায়িক বলেই বলেছে যে, “সুপ্রীম কোর্ট একটি ‘অসাম্প্রদায়িক’ জায়গা, এখানে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মূর্তি কেন থাকবে?” বাঙালি মুসলমানদেরকে এই ‘অছাম্প্রদায়িকতা’ ঝেড়ে ফেলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মতো চিন্তা করতে এবং আচরণ করতে শিখতে হবে, তা না হলে হিন্দু এবং নাস্তিকেরা তাদের ঘাড়ে চেপে বসেই থাকবে। ভারতে হিন্দুরা নিজেদেরকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মনে করে বলেই কথায় কথায় পিটিয়ে মুসলমান মারতে পারে। বিপরীতে এদেশের মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নামের কলঙ্ক বলেই তাদের পাড়া-মহল্লার হিন্দুরা ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করে যায়, কিন্তু একটা হিন্দুকেও গণপিটুনি দিয়ে লাশ ফেলা হয় না। এর জবাব তাদেরকে আখিরাতে অবশ্যই দিতে হবে।

Post a Comment

 
Top