‘মুসলমান আমাদের সব কিছু নিয়ে গেল গো’

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু জনমত গড়ে তোলার মোক্ষম স্লোগান এটি, যে মমতা নাকি মুসলমানদের সব দিয়ে দিল সুতরাং হিন্দুরা সময় থাকতে ধুতি কাছা দাও! তৃণমূলের সমর্থক গর্গ চ্যাটেরজি একটি ভিডিও বের করেছিল এটি নিয়ে। ভিডিওটি আমার দেখা সবচেয়ে ফানি ভিডিওগুলোর একটি, যেখানে ফুটে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের অতি সন্ত্রস্ত মনোভাব, চাকরি-সরকারি সহায়তা তো দূরে, মুসলমানের গলা দিয়ে একটি দানা নামলেও যেন হিন্দুদের সর্বনাশ হয়ে যাবে! (https://youtu.be/xTlNV0JbJOA)

হিন্দুদের অতি-সন্ত্রস্ততার ঠিক বিপরীত হলো মুসলমানদের মনোভাব, ভাবলেশহীন- নিস্পৃহ- অসচেতন। মূলধারা বাংলাদেশ পেজের একটি লেখায় সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে দিল্লীর মুসলমানদের মনোভাব সম্পর্কে বলা হয়েছে- “যখন দিল্লিতে নির্বিচারে মানুষদের মারা হচ্ছিল তখনো তাঁদের কোন হুঁশ ছিলনা। প্রভাবশালী ও অভিজাত লোকদের গ্রেফতার করা হচ্ছিল, গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছিল। অথচ ফাঁসিতে ঝুলানোর আগের দিন রাতেও তারা দাবা ও অন্যান্য খেলায় ব্যস্ত ছিল।”

গত কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে যে রথের মিছিলে বের হয়েছিল, তাতে অংশগ্রহণকারী হিন্দু মহিলারা গেরুয়া পাগড়ি বেঁধে এসেছিল, সবার গায়ে ছিল ‘ক্ষয় ছিড়িরাম’ স্লোগান ওয়ালা টি শার্ট, মাথায় ছিল  উগ্র হিন্দুদের লাল তিলক। উল্লেখ্য, যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে সেইদিন রথ বের হয়েছিল তার নাম ছিল ‘জগন্নাথের রথযাত্রা’, তার সাথে ক্ষয় ছিড়িরাম, লাল তিলক কিংবা গেরুয়া পাগড়ির কোনো সম্পর্কই নেই।

সেক্ষেত্রে অবশ্যম্ভাবীভাবেই প্রশ্ন জাগবে যে, চট্টগ্রামে ঐদিন কেন জগন্নাথের রথযাত্রার সাথে সম্পর্কহীন উগ্র হিন্দু পোশাক পরে হিন্দুরা রাস্তা দখল করেছে? উত্তর সোজা, তা হলো ওটা হিন্দুধর্মীয় মিছিল নয়, হিন্দুত্ববাদী মিছিল ছিল। ইহুদী ধর্মের উগ্র রাজনৈতিক রূপ হলো জায়োনিজম, আর হিন্দুধর্মের ক্ষেত্রে তা হিন্দুত্ববাদ। সুতরাং যেসব কথিত অছাম্প্রদায়িক পুঙ্গবেরা চট্টগ্রামের মিছিলকে ‘হিন্দুদের ধর্মীয় অধিকার’ বলে সাপোর্ট দিয়েছে, তারা রীতিমতো গণ্ডমূর্খ। জগন্নাথের নাম ভাঙিয়ে চট্টগ্রামের ঐ মিছিলের মূল লক্ষ্যই ছিল ভারতের ন্যায় এদেশেও রামকেন্দ্রিক মুসলিমবিরোধী রাজনৈতিক আবহ সৃষ্টি।

সেই হিন্দুত্ববাদী মিছিলের বিরুদ্ধে আমার লেখায় চট্টগ্রামের এক লোক সারাদিন কমেন্টে আমার বিরোধিতা করেছে, যে হিন্দুদেরকে তাদের ধর্ম শান্তিমতো পালন করতে দিন না! শুধু শুধু এসব বলে শান্তি নষ্ট করছেন কেন? তার সাথে তর্ক করে আমার পুরো একটি দিন নষ্ট হয়েছে, কিন্তু চট্টগ্রামের কোনো মুসলমানকে আমি প্রতিবাদ করতে দেখিনি। উল্টো হিন্দুরা তার একেকটি কমেন্টে ৭০-৮০টি লাইক দিয়ে প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছিল। সুতরাং ঐ ব্যক্তির অবস্থানকে চট্টগ্রামের মুসলমানদের সার্বিক অবস্থান বলে ধরে নেয়া যায়।

সে হিসেবে চট্টগ্রামের মুসলমানদের অবস্থা হলো দিল্লীর মুসলমানদের মতো। ফাঁসিকাষ্ঠের দড়ি গলায় লটকে আছে, জল্লাদের ছুরি মাত্র কয়েক ইঞ্চি তফাৎ, তারপরও উভয়েই কতো ভাবলেশহীন, নির্লিপ্ত! হিন্দুরা পান থেকে চুন খসলেই নিজেদের অস্তিত্বের সংকট অনুভব করে, আর চট্টগ্রামে মুসলমানদের সামনে দিয়ে ‘ডাকু রানী’রা গেরুয়া-তিলকের মিছিল নিয়ে গেলেও তাদের কোনো বিকার হয় না। কেউ তাদেরকে সচেতন করতে গেলে বাজখাই গলায় বলে-

আরে মিয়া অশান্তি সৃষ্টি করছেন কেন?

ঠিক ভারতের মুসলমানদের মতো। উল্লেখ্য, মুসলমানদের মধ্যে যখন অছাম্প্রদায়িক মানসিকতা তীব্র হয়, তখন তারা এসব হিন্দু-খ্রিস্টানদের মন পেতে অনেক কিছুতে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করে। যেমন ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুসলমানরা গরুর গোশত না খেতে অভ্যস্ত, এমনকি তাদের অনেকে তা জীবনে ছুয়েও দেখেনি। তাদের কাছে গিয়ে যদি আপনি তাদেরকে নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার কোশেশ করেন, গরুর গোশত খেতে বলেন, তাহলে তারা আপনাকে সোজাসুজি ‘অশান্তি সৃষ্টিকারী’ বলে পুলিশে খবর দেবে।

কিন্তু এই মানিয়ে নেয়ার শেষ এখানেই হয় না। উত্তরপ্রদেশের মিও মুসলমান, যারা গরুর গোশত ছুঁয়েও দেখে না, তাদেরকেই মূলত হিন্দুরা গরু ইস্যুতে পিটিয়ে মেরেছে। সুতরাং চট্টগ্রামের মুসলমানরা গেরুয়া-তিলকে অভ্যস্ত হয়ে হিন্দুদের উগ্র মিছিল করতে দিলেই যে বিষয়টি এখানে মিটমাট হয়ে যাবে তা নয়।

ভারতে যেভাবে ‘ক্ষয় শ্রীরাম’ বলতে বলে মুসলমানদের পিটিয়ে মারা হয়, ঠিক সেভাবেই চট্টগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে সেই ধারাটির সূত্রপাত ঘটবে বলে আমাদের শক্ত অনুমান হয়। তাতেও চট্টগ্রামের মুসলমানরা প্রতিবাদ করবে না, যেহেতু তারা প্রথম ধাপে অভ্যস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে অভ্যস্ত হওয়া শেষে তৃতীয় ধাপে ক্ষয় শ্রীরাম বলে মুসলমান মা-বোনদের ধর্ষণ করা হবে, এরপরও মুসলমানরা প্রতিবাদ করবে না, যেহেতু দ্বিতীয় ধাপে তাদেরকে অভ্যস্ত করা হয়েছে।

ভালো ছাত্র যেমন একবারে খারাপ হয় না, ভালো ছেলে যেভাবে একবারে বখাটে হয় না, ধাপে ধাপে হয়, ঠিক সেভাবেই চট্টগ্রাম তথা সমগ্র বাংলাদেশের মুসলমানদের ধাপে ধাপে অছাম্প্রদায়িক খাসিকরণ করা হবে। খাসিকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া মুসলমানদের যে কোন প্রতিবাদ, প্রতিরোধ অসহ্য বোধ হবে, সে চিন্তা করবে যে অন্যরা তার মতো অছাম্প্রদায়িক খাসি হয়ে যাচ্ছে না কেন? খুশবন্ত সিংয়ের আত্মজীবনীতে এরকম এক মুসলমান নামধারী পুলিশের বর্ণনা রয়েছে। খুশবন্ত সিং যখন ভারতের চুরাশির দাঙ্গায় শিখ নিধনের প্রতিবাদ করছিল, তখন এক মুসলমান পুলিশ অফিসার তাকে ডেকে বলল, এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এতো লাফাচ্ছেন কেন? যে পরিমাণ শিখ মরেছে, সে পরিমাণ মুসলমান তো প্রতিবছরই হিন্দুরা মারছে, কই আমরা তো কোনো প্রতিবাদ করিনি!

খুশবন্ত সিং রেগে বলেছিল, আপনারা মুসলমানরা তো মার খেতে খেতে অভ্যস্ত!

সেক্ষেত্রে ইনশাআল্লাহ, শিখরাও অভ্যস্ত হয়ে যাবে, উক্ত পুলিশ অফিসার নির্লিপ্ত উত্তর দিল।

Post a Comment

 
Top