সাতচল্লিশে কংগ্রেস ক্ষমতা নেয়ার পর ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর লক্ষ্যে অনেকরকম পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল, যার অন্যতম ছিল চাকরিক্ষেত্র থেকে মুসলিম বিতাড়ণ। ভারতীয় ইতিহাসবিদ গোলাম আহমাদ মোর্তজা তার ‘ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়’ বইতে সাংবাদিক গৌতম রায়ের বরাতে উল্লেখ করেছেন-

“একদা কংগ্রেস আমলে উত্তরপ্রদেশে সরকারি চাকরিতে মুসলমান নিয়োগ বন্ধ ছিল। তৎকালীন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (উত্তরপ্রদেশের) রাজ্য বিধানসভায় এই তথ্য স্বীকার করেছে। প্রাক্তন প্রতিরক্ষা রাষ্ট্রমন্ত্রী মহাবীর ত্যাগী সংসদে স্বীকার করেছিল, স্বাধীনতার পর রেল, যোগাযোগ, পুলিশ ও প্রতিরক্ষা বিভাগে মুসলমানদের অনুপাত ৩২ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশ। বল্লভ প্যাটেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সার্কুলার জারি করেছিল, প্রশাসনের মূল এবং নিয়ন্ত্রক ক্ষেত্রগুলিতে যেন মুসলমানদের প্রবেশ না ঘটে।”

বল্লভ প্যাটেল এই যে ‘সার্কুলার’ জারি করেছিল প্রশাসনের মূল ও নিয়ন্ত্রক ক্ষেত্রগুলো থেকে মুসলমান বিতাড়ণের লক্ষ্যে, তার অনুলিপি রামচন্দ্র গুহের ‘গাঁধী উত্তর ভারতবর্ষ’ বইতে দেয়া হয়েছে। সার্কুলারে ভারত সরকার কর্তৃক কাশ্মীর ও হায়দারাবাদে দমনমূলক নীতি অবলম্বন করার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে এবং এর প্রেক্ষিতেই প্যাটেল তার সার্কুলারে লিখেছিল যে-

“কাজেই কোনওরকম গোপন ও অপ্রকাশ্য কাজের ভার মুসলমানদের না দেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে মুসলমান না বসানোটা অত্যন্ত জরুরী”।

‘গাঁধী উত্তর ভারতবর্ষ’ বইটির পিডিএফ কপি রয়েছে। আগ্রহীরা বইটির ৩২৯ পৃষ্ঠায় সার্কুলারটি দেখতে পারবে। (http://bit.ly/2qlL3fg)

একদা মুসলিমশাসিত ভারত যে বর্তমানে হিন্দুপ্রধান একটি রাষ্ট্র, এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সেদেশের প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে মুসলমানের অনুপস্থিতি। সাতচল্লিশের পরপরই প্রশাসন থেকে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম বিতাড়ণের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল বল্লভ প্যাটেল, যা কিনা বর্তমানে মোদির উগ্র হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।  একারণেই মোদি প্যাটেলের এমন মূর্তি বানিয়েছে, যা কিনা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড়।

বিপরীতে পাকিস্তান গঠনের পর হিন্দু বিতাড়ণের অনুরূপ কোনো পদক্ষেপই মুসলিম নেতারা নেয়নি। সে কারণেই হয়তো বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দু শিক্ষক দ্বারা মুসলিম ছাত্রী ধর্ষণ করা হয়, অনলাইনে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করা হয়, দেবোত্তর সম্পত্তির নামে মুসলমানদের জমি দখল করে নেয়া হয়।

Post a Comment

 
Top