“আওয়ামীলীগ হইয়া গেলেও কোন আপত্তি নাই। আওয়ামীলীগের মধ্যে এমন এমন মানুষ আছে, যারা দ্বীনকে ভালবাসে, আমাদেরকে মোটা অংকে মাদ্রাসায় সাহায্য করে। মোটা অংকে সাহায্য করে।”

‘মোটা অংকে সাহায্য করে’ কথাটি শফী সাহেব দু’বার উচ্চারণ করেছে তার ভাষণে। দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সময়ে এর প্রতিষ্ঠাতা কাসিম নানুতবী মাদ্রাসা পরিচালনার আটটি মূলনীতি ঠিক করে দিয়েছিল, যাকে ‘উসুলে হাস্তগানা’ বলা হয়। মূলনীতির প্রথম ধারাটি হচ্ছে-

“বেশি বেশি করে চাঁদা আদায় করতে হবে”

দেওবন্দের অনুসারী সমস্ত কওমি মাদ্রাসাগুলো এই নীতিতেই পরিচালিত হয়, যে কারণে টাকাই তাদের নিকট মূল ফ্যাক্টর বিবেচিত হয়। এই টাকার বিনিময়ে তারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগার হয়, আর ভারতে বিজেপির সমর্থক হয়।

বর্তমানে ভারতে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলো, যেমন উত্তরপ্রদেশ, আসামে কেন বিজেপি জয়ী হচ্ছে, অনেকের মনেই এই প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। এর উত্তর খুবই সহজ, তা হলো ঐসব এলাকার কওমি মাদ্রাসাগুলোতে বিজেপির নেতারা চাঁদা দেয়। এই টাকার বিনিময়ে কওমি মাদ্রাসাগুলো প্রচারণা চালিয়ে স্থানীয় মুসলমানদের সমর্থন বিজেপির দিকে ঘুরিয়ে দেয়।

ভারতে বিগত ত্রিপুরা নির্বাচনে সেখানে বিজেপি জয়ী হয়। সেই নির্বাচনের আগে বিজেপি সেখানকার কওমি মাদ্রাসাগুলোতে টাকা দেয়। বিজেপির দেয়া সেই টাকার চেকের ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের উগ্র হিন্দু সংগঠন ‘হিন্দু সংহতি’র এক নেতা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ‘কাসিমুল উলুম’ নামক একটি মাদ্রাসাকে পাঁচ লাখ টাকার চেক দেয়া হয়েছে বিজেপির প্রেসিডেন্ট ও স্টেট প্রেসিডেন্টের সিগনেচার সহ। উল্লেখ্য, ক্বওমি মাদ্রাসাগুলো প্রায়শই তাদের নাম তাদের প্রতিষ্ঠাতা ‘কাসিম নানুতবী’র নামানুসারে ‘কাসিমুল উলুম’ রেখে থাকে। (http://bit.ly/2zPpObh)

ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা যে প্রতিবছর গরু কুরবানীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়, সে বিষয়টি আগেও বিভিন্ন পোস্টে উল্লেখ করেছি। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পর মুসলমানদের সমস্ত কসাইখানাও বন্ধ করে দেয় ‘অবৈধ’ ট্যাগ দিয়ে। আদিত্যনাথের এই তীব্র মৌলবাদী পদক্ষেপের প্রশংসা করে বিবৃতি দিয়েছিল আরশাদ মাদানী, দেওবন্দের প্রিন্সিপাল হুসাইন মাদানীর ছেলে। (http://twocircles.net/2017may08/409083.html)

উল্লেখ্য, এদেশে দেওবন্দী মাদ্রাসাগুলোতে আরশাদ মাদানী প্রধান মুরুব্বীদের একজন বলে বিবেচিত হয়, তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভারত থেকে তাকে প্রধান অতিথি করে আনা হয়। এদেশে দেওবন্দীরা ঈদের দিনে কুরবানীর চামড়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করে, আর ভারতে তারা গরু কুরবানী বন্ধ করে দেয়ার জন্য যোগীর প্রশংসায় বিবৃতি দেয়। এই যে তাদের পরস্পরবিরোধী অবস্থান, এর মূল কারণ হচ্ছে ডোনার বা দাতাগোষ্ঠীর পার্থক্য। বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার মূল ডোনার হচ্ছে সাধারণ মুসলমানরা, বিপরীতে ভারতে কওমি মাদ্রাসার মূল ডোনার হচ্ছে হিন্দুরা, নির্দিষ্ট করে বললে বিজেপিপন্থী উগ্র হিন্দুরা।

ভারতে অবস্থিত কেন্দ্রীয় দেওবন্দ মাদ্রাসার ইতিহাস নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ‘দারুল উলুম দেওবন্দের ইতিহাস’ নামক একটি বই রয়েছে। বইটি উর্দুতে লেখা ‘তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ’ এর বাংলা অনুবাদ, যা কিনা ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কর্তৃক সার্টিফায়েড তাদের নিজস্ব ইতিহাস। বইটির ১৮৭ নং পেজে একটি অধ্যায় রয়েছে, যার শিরোনাম হলো ‘হিন্দু সহযোগী’। (http://bit.ly/2HJEr1T)

সেখানের শুরুতেই বলা হয়েছে, “দারুল উলূমের সাহায্য-সহযোগিতা ও চাঁদাদানের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই এ নিয়ম চলে আসছিল যে, সকল ধর্মাবলম্বীদের চাঁদা এখানে গ্রহণ করা হতো। এ কারণে দেওবন্দ মাদ্রাসার কার্যবিবরণীর স্থানে স্থানে হিন্দু ও অন্যান্য অমুসলিম চাঁদাদাতাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।”

অর্থাৎ সোজা ভাষায়, যদি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের চাঁদার রসিদের বই চেক করা হয়, জায়গায় জায়গায় হিন্দু ও বিজেপি নেতাদের নাম পাওয়া যাবে। ঠিক সেভাবেই হাটহাজারী মাদ্রাসার চাঁদার বইয়ের জায়গায় জায়গায় পাওয়া যাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম। সুতরাং বাংলাদেশের দেওবন্দীদের আওয়ামীলীগ হইয়া গেলেও কোন আপত্তি নাই, যেমনটি ভারতের দেওবন্দীদের বিজেপি হইয়া গেলেও কোন আপত্তি নাই।
Dastaar Rajdarbaar

Post a Comment

 
Top