ভারতীয় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার কয়েকদিন আগে ফেসবুকের একটি জিওপলিটিক্যাল গ্রুপে উপরের কমেন্টটি দেখেছিলাম। তাতে মত প্রকাশ করা হয়েছিল যে, চীনই নাকি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের ন্যায় ভারতে মোদিকে নির্বাচনে জয়ী করবে, কারণ কংগ্রেস ধ্বংস হলে ভারতও ধ্বংস হবে।
চীন আদতেই মোদিকে সাহায্য করেছে কিনা, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, কংগ্রেস ধ্বংস হলে ভারতও ধ্বংস হবে। কারণ অখণ্ড ভারত ও হিন্দুত্ববাদের আত্মা কংগ্রেসই ধারণ করে। এখানে বিষয়টি হচ্ছে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী লম্ফঝম্ফ বেশি, আর মূর্খ জনগণ ওটা দেখেই ভোট দেয়। হাকীকত তারা বোঝে না।
উদাহরণস্বরূপ, বিজেপি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেছে গরু নিয়ে, গরুকে কেন্দ্র করে মুসলমান পিটিয়ে মারা নিয়ে। এই গরু জবাই বিরোধী আন্দোলনকে ভারতে ব্যাপক রূপ দিয়েছিল যে ব্যক্তিটি, তা হচ্ছে ভারতীয় কংগ্রেসের প্রাণপুরুষ গান্ধী। এই গান্ধী তার রাজনীতিতে নামার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিল যে, “আমি রাজনীতি করছি গো-মাতাকে মুসলমানদের জবাইয়ের ছুরির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।” বিমলানন্দ শাসমলের ‘ভারত কী করে ভাগ হলো’ বইতে এর উল্লেখ রয়েছে।
পক্ষান্তরে বিজেপির অবস্থা কিন্তু হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো। মাঝে মাঝে এরকম কিছু ভাঁড় সংগঠনের সন্ধান মেলে, যারা মূল দলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বলে, আমরাই জিয়া কিংবা মুজিবের ‘আসল’ আদর্শে বিশ্বাসী। বিজেপিও সেরকম গো-রক্ষা আন্দোলনের জনক গান্ধীকে হিন্দুবিরোধী বলে, আর তার হত্যাকারী গডসেকে বলে ‘আসল’ হিন্দু। কথিত রয়েছে যে, শুয়োরের বাচ্চার দাঁত গজালে বাপের পাছায় কামড় দিয়ে শক্তি পরীক্ষা করে। গান্ধীর বদৌলতেই হিন্দুরা ভারতের মতো হিন্দুরাষ্ট্র পেয়েছে, গরু জবাই বিরোধী উগ্র হিন্দুত্ববাদ পেয়েছে। গান্ধী প্রদত্ত হিন্দুত্ববাদী শ্বদন্ত দিয়েই তারা বাপের পাছায় কামড় দিয়ে শক্তি প্রদর্শন করছে।
বিগত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, মূল মূল ইসলামবিদ্বেষী পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এই কংগ্রেসের দ্বারা হয়েছে। পাকিস্তান ভেঙে দেয়া, সিকিম দখল করে নেয়া, শ্রীলঙ্কার তামিল সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, সব কংগ্রেসের দ্বারা হয়েছে। কংগ্রেস কম হিন্দুত্ববাদী? বাবরি মসজিদ ভাঙার কাজটি কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রীর ইন্ধনেই হয়েছে, যেটা ধুয়ে ধুয়ে এখনো এই বিজেপিরা পানি খেয়ে থাকে। মুসলমান তো বটেই, এমনকি শিখদের মন্দিরে হামলা করা, শিখবিরোধী দাঙ্গাও এই কংগ্রেসের আমলেই হয়েছে। ভারতে ‘পোটা’ নামক কালো আইন, যা ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ মুসলিম যুবককে জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে, কংগ্রেস সরকারের করা। ২০১৪র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বর্তমান শাসনব্যবস্থার সংকট, কংগ্রেসের কারণে হয়েছে।
মূলত কংগ্রেস হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী বিষবৃক্ষের শেকড়, অখণ্ড ভারততত্ত্বের বিষবৃক্ষের শেকড়। বিজেপি তার ডালপালা মাত্র। শেকড়কে বাদ দিয়ে ডালপালা যেমন টিকবে না, ঠিক সেভাবেই কংগ্রেসকে ধ্বংস করে বিজেপি সব উল্টে ফেলবে, এটা ভাবাটা হাস্যকর বৈ কিছু নয়। বরং কংগ্রেস ধ্বংস হলেই ভারতের ধ্বংস অনিবার্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
পরিশিষ্টঃ চীন কি আসলেই মোদিকে সাহায্য করেছে? প্রশ্নটির সরাসরি উত্তর দেয়া যাচ্ছে না, কিন্তু লক্ষ্যণীয় যেই মার্কিনপন্থী গোষ্ঠীটি ২০১৪ সালে মোদির পক্ষে ছিল, সেই গোষ্ঠীটিই এবার মোদির আগমনে খুব একটা সন্তুষ্ট নয়। ২০১৪ সালে মোদি আসার আগে নিউইয়র্কের টাইম ম্যাগাজিনের শিরোনাম ছিল ‘মোদি মিনস বিজনেস’। তাতে মোদির আগমনে ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে বলে মত প্রকাশ করা হয়। আর এবারের নির্বাচনে তাদের শিরোনাম ছিল ‘ডিভাইডার ইন চীফ’, বিচ্ছিন্নতাবাদের গুরু। আবার সিআইএপন্থী কথিত নাস্তিক ব্লগাররা, যারা কথায় কথায় ইসরায়েলের প্রশংসা করে থাকে, তারাও কেন জানি মোদির আগমনে খুব একটা খুশি নয়।
তাছাড়া একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, তা হলো চীনের জন্য কি মোদির চেয়ে কংগ্রেস বেশি ভালো হবে? মোটেই নয়, কারণ শুরুতেই উল্লেখ করেছি যে কংগ্রেসই মূলত অখণ্ড ভারত ও হিন্দুত্ববাদী আদর্শের আত্মাকে ধারণ করে। মোদিরা যতোই লম্ফঝম্ফ করুক, তাদের কিন্তু কংগ্রেসের মতো আদর্শিক ভিত্তি মোটেই নেই।
মোদি আর বিজেপি মূলত বোঝে কেবল টাকা, আর সেই টাকা লুটপাট করতেই তারা হিন্দুদেরকে মুসলিমবিদ্বেষী হুজুগে ব্যস্ত রাখে। তারা একদিকে গরুর নামে মুসলমান পিটিয়ে মারে, আবার বিফ রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম হয়। এই মোদির আমলেই ভারতে চীনের ব্যবসা সবচেয়ে বেশি প্রসারিত হয়েছে, হয়তো পরের দফায় আরো হবে। কংগ্রেস হলে এমনটি হওয়া সম্ভব হতো না।
ছবিতে গান্ধী ও মালব্য, ব্রিটিশ আমলে গো-রক্ষা আন্দোলনের দুই প্রধান নেতা।

Post a Comment

 
Top