৪৭ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে দুটি ধর্মীয় জাতিরাষ্ট্রের বিষবৃক্ষ রোপিত হয়েছিল, একটি হলো ইসরায়েল, অপরটি ভারত। ইসরায়েল তার জন্মের শুরুতেই ঘোষণা দিয়েছিল, দুনিয়ার যে কোনো ইহুদি তার ইহুদি পরিচয়ের কারণেই ইসরায়েলের নাগরিকত্ব পাবে। ইসরায়েলের এই ঘোষণার কারণে পৃথিবীর যেসব দেশে অনুকূল পরিবেশের কারণে ইহুদী বসতি গড়ে উঠেছিল, সেগুলোও কয়েক বছরের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। উদাহরণের জন্য বেশিদূর যেতে হবে না, পাশ্ববর্তী ভারতেই একটি সময়ে বহু ইহুদী বসবাস করত, যাদের বংশধররা এখন সবাই ইসরায়েলে বসবাস করে।

মরক্কোর রাজা দ্বিতীয় হাসান ছিল কঠিন ইহুদীপ্রেমী, জন্মের পর যার দুধমা-ই ছিল এক ইহুদী মহিলা। এই হাসান আরব নেতাদের এক পারস্পরিক আলোচনা, যেখানে তারা তাদের সৈন্যঘাটি ও অস্ত্রশস্ত্রের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করছিল, তার অডিও টেপ ইসরায়েলকে দিয়েছিল। যার ফলে ছয়দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল অতর্কিতভাবে মিসর ও সিরিয়ার সামরিক গোপনীয় স্থানে হামলা করতে সক্ষম হয়েছিল এবং এর ফলেই ইসরায়েল জেরুজালেম, পশ্চিম তীর, গাজা দখলে সমর্থ হয়।

এই দ্বিতীয় হাসানের মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্যে ইসরায়েলের প্রধান নেতারা যোগ দিয়েছিল, ইসরায়েলে অবস্থানরত মরক্কো বংশোদ্ভূত ইহুদিরা ৭ দিনের শোক পালন করেছিল। (https://nyti.ms/2JIqrbE) অথচ উইকিপিডিয়া অনুসারে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগে মরক্কোতে ইহুদীসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার, বর্তমানে সেখানে মাত্র ২৫০০ জন ইহুদী রয়েছে।

এখানে আমরা দেখতে পাই, চরম অনুকূল পরিবেশ ও শাসক থাকা সত্ত্বেও সংখ্যাগতভাবেই ইহুদীদের সংখ্যা কমেছে, কারণ ইহুদীদের নিকট ইসরায়েল ছিল ‘প্রমিজড ল্যান্ড’। সেই প্রমিজড ল্যান্ডের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সেখানে ইহুদী মাত্রই নাগরিকত্ব দেয়া হবে। সম্প্রতি ভারতরাষ্ট্রও তার এই চরিত্র উন্মোচন করেছে, যে অন্য দেশের হিন্দুদেরকে সেখানে নাগরিকত্ব দেয়া হবে আর সেদেশের বাপদাদা বংশপরম্পরায় বসবাসরত মুসলমানদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হবে।

সে হিসেবে কেন যৌক্তিকভাবেই বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা কমবে না, যদিও বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ চরম হিন্দুতোষণকারী হোক না কেন? মরক্কোর রাজা কি কম ইহুদীতোষক ছিল, হিন্দুরা কি কম ইহুদীপ্রেমী? তাদের দেশে তো ইহুদীরা থাকেনি।

তবে আমার বলার বিষয় হচ্ছে, মরক্কোতে কিংবা ভারতে ইহুদী কমলেও, বাংলাদেশে কিন্তু আদতে হিন্দুদের সংখ্যা কমেনি। ভারত কিংবা মরক্কোতে সংখ্যাগত তুলনা দিয়ে দেখানো যায় যে, ইহুদীরা কমেছে। সেসব দেশে পঞ্চাশ বছর আগে যেখানে কয়েক লাখ ইহুদী থাকত, তারা এখন কয়েক হাজারে নেমে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এরকম সরাসরি সংখ্যাগত তুলনা দেয়া হচ্ছে না, যে কারণে হিন্দুরা শতকরা হিসাবের গোঁজামিল দিয়ে গোটা জাতিকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।

প্রথমে আমাদেরকে দেখতে হবে যে, সংখ্যাগতভাবে হিন্দু জনসংখ্যা আসলেই কমেছে কিনা। নিচের লিস্টটি উইকিপিডিয়াতে দেয়া (http://bit.ly/2Oc0HZi)। প্রথম কলামে বছর, দ্বিতীয় কলামে হিন্দু জনসংখ্যা ও তৃতীয় কলামে আগের বছরের তুলনায় শতকরা বৃদ্ধি-

Year Pop. ±%

1901 9,546,240 —

1911 9,939,825 +4.1%

1921 10,176,030 +2.4%

1931 10,466,988 +2.9%

1941 11,759,160 +12.3%

1951 9,239,603 −21.4%

1961 9,379,669 +1.5%

1974 9,673,048 +3.1%

1981 10,570,245 +9.3%

1991 11,178,866 +5.8%

2001 11,379,000 +1.8%

2011 12,492,427 +9.8%

এখানে স্পষ্টভাবেই একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়, তা হলো হিন্দু জনসংখ্যা প্রতিবছরই আগের বছরের তুলনায় সংখ্যাগতভাবে বেড়েছে, কখনোই কমেনি। মূলত হিন্দুরা যে গোঁজামিলটি দিয়েছে তাদের হিসাবে, তা হলো তারা নিজেদেরটা বাদ রেখে গোটা দেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধিহারের সাথে নিজেদেরটা কেন বাড়ল না, তার প্রশ্ন তুলেছে। এই গোঁজামিল দিয়েই প্রিয়া সাহা ৩৭ মিলিয়ন ‘মিসিং’ দাবি করেছে। এখন বাংলাদেশ হলো মুসলিম অধ্যুষিত দেশ, আর মুসলমানদের বৃদ্ধিহার সবসময়ই হিন্দুদের চেয়ে বেশি। খোদ হিন্দুপ্রধান ভারতেও এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। 

সুতরাং বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধিহার মূলত মুসলিম জনসংখ্যারই বৃদ্ধিহার, ঐ বৃদ্ধিহারকে নিজেদের বেস ফিগারের সাথে গুণ করে হিন্দুরা যদি দাবি করে তাদের এই লোকজন ‘মিসিং’ হয়েছে, সেক্ষেত্রে তা হবে চূড়ান্ত অসততার পরিচায়ক। অথচ হিন্দুদের নিজস্ব জনসংখ্যা কিন্তু প্রতিবছরই বেড়েছে, উপরের চার্টে দেয়া হিন্দু জনসংখ্যার প্রতিবছরের বৃদ্ধিহারই প্লাস। একবারই কেবল মাইনাস 21.4 পার্সেন্ট দেখা যায়, তা হলো ১৯৫১ সালে দেশভাগের পর। তার দায় মুসলমানদের নয়, কারণ বাংলা ভাগ করার প্রস্তাবকারী ছিল হিন্দুরা। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়টি হচ্ছে, একাত্তরের যুদ্ধের পর ৭৪ সালের যে জনগণনা, সেখানেও দেখা যাচ্ছে যে এদেশে হিন্দুর সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে। ৬১ সালে হিন্দুরা ছিল ৯৩ লাখ ৭৯ হাজার, ৭৪ সালে তা ছিয়ানব্বই লাখ অতিক্রম করে।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে প্রায়শ হিন্দুরা দাবি করে যে ৩০ লাখ নিহতের মধ্যে ২৪ লাখ নাকি হিন্দু ছিল! এখন চব্বিশ লাখ হিন্দুই যদি মরত, তাহলে চুয়াত্তর সালের গণনায় এই বাড়তি ৩ লাখ হিন্দু কোথা থেকে আসল? একটি গল্পে পড়েছিলাম, রাধুনী নিজে ১ কেজি গোশত খেয়ে দাবি করল বিড়ালে তা খেয়ে ফেলেছে। পরে বিড়ালটি ওজন করে দেখা গেল তার ওজনও ঠিক ১ কেজি, সেক্ষেত্রে তার খাওয়া গোশত কোথায় গেল?

সুতরাং পাঠকেরা বুঝতে পারছেন যে, হিন্দুদের সংখ্যা এদেশে কয়েক লাখ তো দূরে, কয়েক হাজার হলে সেটাই বরঞ্চ গোটা দুনিয়ার নিয়ম অনুযায়ী স্বাভাবিক হত। কিন্তু বাংলাদেশে তার বাত্যয় ঘটেছে, কারণ হিন্দুরা বুঝতে পেরেছিল যে এমন একটি দেশের সৃষ্টি হতে যাচ্ছে, যেখানে প্রকাশ্য দেশদ্রোহিতায় লিপ্ত হলে হিন্দু পরিচয়ের কারণে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত নতজানু হবে, হিন্দু পরিচয়ের কারণে বটতলার উকিলকে পর্যন্ত চীফ জাস্টিস বানিয়ে দেয়া হবে আর মুসলমান শিশুদের হরে কৃষ্ণ বলিয়ে প্রসাদ খাওয়ালেও একটা হিন্দুর মরামুখও কোনো অথর্ব অছাম্প্রদায়িক মুসলমান নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না।

Post a Comment

 
Top