সম্প্রতি বিজেপি জেতার পর অনেকেই বলাবলি করছে যে, গাযওয়াতুল হিন্দ আসন্ন! এখন গাযওয়াতুল হিন্দ তো মুখের কথা নয়, এর অবশ্যই লক্ষ্যউদ্দেশ্য রয়েছে। সবাই বলবে, এর উদ্দেশ্য উপমহাদেশকে মুশরিকদের থাবা থেকে করায়ত্ত্ব করা। কিন্তু যেখানে নিজেদের ভূখণ্ডই মুসলমানরা own করছে না, সেখানে অপরেরটা নিজেদের আওতায় নিবে কী করে?
ভারতে হিন্দুরা মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যা করে, কারণ তারা তাদের দেশকে own করে। তারা মনে করে যে তারা হিন্দু এবং তাদের দেশটা কেবলই হিন্দুদের, যে কারণে মুসলমানদের কথায় কথায় চড়থাপ্পড় দিতে হবে, গরুর ছুতোয় পিটিয়ে মারতে হবে।
ইউরোপে মসজিদের মিনার করতে দিতে, কিংবা বোরখা পরতে দিতে চায় না খ্রিস্টানরা। কারণ মসজিদের মিনার কিংবা ইসলামী পোশাক, পরিবেশে ইসলামী আবহ নিয়ে আসে। আর সেটি হলে তাদের সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের আয়ত্ত্বে থাকবে না, সেই আশঙ্কা তারা সবসময় করে থাকে এবং তাদের দেশের মিডিয়া ও পত্রপত্রিকা সর্বদা তাদের মনে সেই ভয় জাগরুক রাখে।
কিছুদিন আগে, কুমিল্লা ভার্সিটিতে এক হিন্দু ছাত্র চরম ইসলামবিরোধী কটূক্তি করে জেলে যায়। সেই হিন্দুর গ্রেফতারের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এক নিরপরাধ মুসলিম ছেলের নামে মিথ্যা স্ক্রীনশট তৈরী করে তাকে ফাঁসায় হিন্দুরা। শুধু তাই নয়, তার বাড়িতেও হামলা করে। জান বাঁচাতে সেই ছেলে থানায় অভিযোগ করতে গেলে উল্টো পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য, আমি হিন্দুদের সিক্রেট গ্রুপগুলোতে কুমিল্লা ভার্সিটির হিন্দু ছাত্রদের বেশকিছু স্বীকারোক্তি দেখেছি যে, ছেলেটি নিরপরাধ। তারপরও এই ঘটনায় মুসলমানদের কোনো প্রতিবাদ চোখে পড়েছে? পড়েনি, কারণ মুসলমানরা তাদের নিজেদের ভূখণ্ডকে own করে না।
সম্প্রতি নুহাশ হুমায়ুনের একটি বিজ্ঞাপনের জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হয়েছে, কারণ সে তার বিজ্ঞাপনে পাহাড়ি অঞ্চলে রোযা, ইফতার এসবের দৃশ্যায়ন করেছে। ইসলামী অনুষঙ্গ তুলে ধরার জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়েছে, মুসলমানরা বুঝতে পারছে যে তাদের অস্তিত্বকে কতোটা অপমান করা হয়েছে এর মাধ্যমে? পাহাড় অঞ্চলে নামায, রোযাকে তুলে ধরে যদি ক্ষমা চাইতে হয়, তাহলে সেদিন বেশি দূরে নয় যে এই পাহাড়ে ইসলাম ধর্ম পালন করাটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং সেখানেও রোহিঙ্গাদের মতো ব্যাপক হারে মুসলমানদের হত্যা-ধর্ষণ করা হবে।
মুসলমানরা যদি তাদের দেশটাকে own করতো, তাহলে নুহাশ হুমায়ুনের ঘটনার পর গোটা দেশে আগুন জ্বলতো। উল্লেখ্য, যখন মানুষ নিজ এলাকায় বা দেশে থাকে, তখন সে তার সম্প্রদায়ের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যখন সে দেশের বা এলাকার বাইরে যায়, তখন সে অপরের সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করে। আভিধানিক অর্থে এই নিজ সম্প্রদায়ের ক্ষমতা দেখানোই হলো ‘সাম্প্রদায়িকতা’, যা কিনা প্রতিটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল বৈশিষ্ট্য। এর বিপরীতে অছাম্প্রদায়িকতা হলো ভীরু কিংবা দুর্বল মানুষের অবলম্বন, যা মানুষ প্রবাসী হলে কিংবা ভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংখ্যালঘু হলে ধারণ করে থাকে।
আফসোসের বিষয়, এদেশের মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও ‘অছাম্প্রদায়িকতা’ ধারণ করে থাকে, যে কারণে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও নিজদেশে পরবাসী। সাম্প্রদায়িকতা ব্যতীত কেউই নিজ দেশ ও জাতিকে আপন করে নিতে পারে না। পাশ্ববর্তী দেশের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা ঠাকরের উত্থান ঘটেছিল ‘মারাঠা জাতীয়তাবাদ’ এর উপর ভর করে। তার নেতৃত্বে মহারাষ্ট্র থেকে বহিরাগত তামিল, বিহারী সবাইকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। তার স্লোগান ছিল, মহারাষ্ট্র মারাঠিদের জন্য।
কিন্তু আমরা ভাবতে পারি না যে, বাংলাদেশ বাঙালি মুসলমানদের জন্য, কারণ আমরা সাম্প্রদায়িক নই। যদি বাঙালি মুসলমান নিজ দেশকে own করতে পারত, তাহলে ভারতীয়রা চাকরি করতে আসলে লাঞ্ছিত হয়ে ফেরত যেত, বাংলাদেশের পানিসীমায় ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরতে আসলে তাদেরকে কেটে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হতো। যদি বাঙালি মুসলমান দেশটাকে own করতো, তাহলে আম ও ফলমূল ধ্বংস করতে আসলে ম্যাজিস্ট্রেটকে গণপিটুনি খেয়ে জামাকাপড় ছিঁড়ে ভাগতে হতো। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে আসলে ইউএনওকে গণধোলাই দেয়া হতো। যদি বাঙালি মুসলমান নিজ দেশকে own করতো, তাহলে হিন্দুরা ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করলেই তাদেরকে পিটিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতো, জেল-আদালতের পরোয়া কেউ করতো না।
এদেশের মুসলমানরা সাম্প্রদায়িক নয়, আর সাম্প্রদায়িক নয় বিধায় তারা এদেশকে own করে না। তাদের নিজেদের ভূখণ্ডকে own না করেই তারা গাযওয়াতুল হিন্দ করবে, হিন্দুদের ভূখণ্ড তথা ভারত জয় করবে এটা হাস্যকর চিন্তা ছাড়া কিছু নয়। উল্টো অন্যদের দ্বারা নিজেদের ভূখণ্ড হাতছাড়া হওয়ার সম্ভবনা আছে, কারণ হিন্দু-বৌদ্ধ সবাই সাম্প্রদায়িক, সবাই তাদের দেশকে own করে। একমাত্র মুসলমানরাই অছাম্প্রদায়িক বিধায় তার থেকেও নেই, তার সমস্তকিছুই সবাই লুটপাট করে নিয়ে যায়।

Post a Comment

 
Top