সম্প্রতি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ চলাকালীন যাকাত নিয়ে একটি ধৃষ্টতাজনক সংবাদ সকলের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, আর তা হলো মাগুরার এক বিপথগামী ব্যবসায়ী কর্তৃক যাকাতের অর্থ প্রদানের নাম করে আয়োজিত হয়েছে হিন্দুধর্মীয় বিয়ে। নাউযুবিল্লাহ! শুধু তাই নয়, পবিত্র যাকাত নিয়ে খেলতামাশাসূচক উক্ত অপকর্মের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পত্রিকাগুলোতে উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক পিএস বা একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখরের নাম। (https://bit.ly/2Wqt8Wy)
এতে সন্দেহ নেই যে, ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-আমলাদের তুলনায় এই শিখরেরা দলের অনেক বেশি প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। সুতরাং এক হিসেবে এটি আওয়ামী লীগেরই দলীয় অবস্থান বলে ধরে নেয়া যায়। বর্তমান আওয়ামী লীগ দলটির এসব কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সে তার নিজের পরিচয়কে রাজনৈতিক দলে সীমাবদ্ধ না রেখে স্বতন্ত্র ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ইচ্ছুক। আওয়ামী লীগের এই অতীব ধৃষ্টতার তুলনা চলে বাদশাহ আকবরের দ্বীনে-ইলাহীর প্রণয়নের ইতিহাসের সাথে। এই আকবরের শাসনামলে হিন্দুরা তাকে উপাধি দিয়েছিল ‘জগদীশ্বর’, বা জগতের ঈশ্বর। ‘ঈশ্বর’ উপাধি যেহেতু পেয়েই গিয়েছে, সেহেতু নিজের খেয়াল-খুশিমতো ধর্ম প্রণয়ন করতে, কিংবা শরীয়ত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আহকামের বিরোধিতা করতে অসুবিধা কোথায়?
উল্লেখ্য, প্রতিবছর পূজার সময়ে অবধারিতভাবেই আওয়ামী নেতাকর্মীদের ছবি ও বক্তব্য মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায়, ঐসব মন্ত্রী-কামলাদের সামনে হিন্দুরা হাতজোড় করে রয়েছে, এক অর্থে তাদেরকে যেন পূজাই করছে। তাছাড়া জোরপূর্বক ক্ষমতায় আরোহনের বিষয়টি তো রয়েছেই, ফলে আকবরের ন্যায় আওয়ামী নেতাকর্মীদেরও নিজেদেরকে ‘ঈশ্বর বলে বোধ হচ্ছে। আর তারই অবধারিত পরিণতি হচ্ছে শরীয়ত নির্দেশিত যাকাতের খাতকে অবজ্ঞা করে হিন্দুর বিয়েতে তা খরচ করা, শরীয়ত নিয়ে তাচ্ছিল্য করা।
উল্লেখ্য, আকবরের দ্বীনে-ইলাহীর যেসব বৈশিষ্ট্য ইতিহাসের পাতায় উল্লেখিত হয়েছে, তার সাথে এই নব-আবিষ্কৃত আওয়ামী ধর্মের রয়েছে আশ্চর্য মিল। উদাহরণস্বরূপ আকবর-প্রণীত দ্বীনে ইলাহীর কিছু বৈশিষ্ট্য হলঃ ১) গরু কুরবানীকে নিরুৎসাহিত করা, অতঃপর নিষিদ্ধ করা, ২) মেয়েদের মাথায় কাপড় দেয়া ও পর্দার বিধান রহিত করা, ৩) দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ করা, ৪) হাতে রাখী বাঁধা ও নববর্ষ পালন, ৫) মসজিদ ভেঙে মন্দিরে পরিণত করা ইত্যাদি।উপরোক্ত সবগুলো বৈশিষ্ট্য তথা কুরবানী বিরোধিতা, পর্দা বিরোধিতা, মসজিদ ভাঙাসহ সবকয়টিই বর্তমান আওয়ামী ধর্মে বিদ্যমান। অনেকেই বলে থাকেন, এই আওয়ামী লীগ করলে নাকি মুসলমান থাকা যায় না। এ প্রসঙ্গে বিগত নির্বাচনে বি-বাড়িয়ার নবীনগর আসন থেকে তাদের দলীয় পদপ্রার্থী এবাদুল করিম বুলবুলের বিষয়টি উল্লেখের দাবি রাখে। নির্বাচনের আগে তাকে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সে তার এলাকার একজন প্রধানতম ব্যবসায়ী, কিন্তু কখনোই সে এলাকার পূজামণ্ডপগুলোতে কোনো অর্থ সহায়তা করে না। সে স্বাভাবিক উত্তর দিয়েছিল যে, দ্বীন ইসলামে মূর্তিপূজায় সহায়তা করা হারাম।
কিন্তু কয়েকদিন পরেই সে তার ভোল পাল্টে ফেলে। সংবাদ সম্মেলন করে সে তার পূর্বেকার মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং তাৎক্ষণিকভাবেই ১১৫টি পূজা মণ্ডপে পাঁচ হাজার টাকা করে পৌনে ছয় লাখ টাকা সে প্রদান করে। (http://bit.ly/2X3AFaD)
এটাই কি প্রমাণ করে না যে, আওয়ামী লীগ বর্তমানে আলাদা একটি ধর্ম এবং নিজের মুসলমানিত্ব ত্যাগ করেই এই ধর্মে দাখিল হতে হয়। উল্লেখ্য, বাদশাহ আকবরের দ্বীনে ইলাহী-র অনুসারী ছিল মাত্র ১৭ জন, তাও তার কিছু সভাসদদের মধ্য থেকে। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ তাতে ছিল না। ঠিক সেভাবেই আওয়ামী ধর্মের সাথে সাধারণের সম্পর্ক নেই, কিছু জনবিচ্ছিন্ন চুশীল সেই ধর্ম পালন করে থাকে। কিছুদিন আগে আওয়ামী ধর্মের গুটিকয়েক অনুসারীকে নিয়ে যে পুলিশসর্বস্ব অমঙ্গল পূজাযাত্রা আয়োজিত হলো টিএসসিতে, তাতেও ঠিক সেই দৃশ্যটিই সবার চোখে পড়েছে।

Post a Comment

 
Top