গুলশান হামলার আবহ চলাকালীন সময়েই আজকে সরকারের সহযোগিতায় ধুমধাম করে হিন্দুরা রথযাত্রা করছে, যা অন্য কোন দেশ হলে কখনোই সম্ভব ছিল না। অন্যান্য দেশের সরকার অনেক দায়িত্বশীল, তারা ‘সংখ্যালঘু’ সেন্টিমেন্ট রক্ষা করতে গিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে আপস করে না।

মন্দিরে না হয় একটি বাউন্ডারীর মধ্যে পুলিশ দিয়ে হিন্দুদের ভিআইপি সুবিধা দেয়া হয়, মুসলমানদের ট্যাক্সের টাকায় পোষা পুলিশ দিয়ে। কিন্তু রাজপথের বিরাট একটি মিছিলে কোন নাশকতা বা বোমা হামলা ঘটলে তা ঠেকানোর কোন উপায় নেই। বাবরি মসজিদ ভাঙার ইতিহাস আপনারা সকলেই জানেন। এর সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৯০ সালে আদভানির করা ‘রাম রথযাত্রা’ নামক একটি রথযাত্রা থেকে, উইকিপিডিয়াতে Ram Rath Yatra লিখে সার্চ দিলে পাবেন।

যদি আদভানির রথযাত্রা গোটা ভারতবর্ষকে উলটপালট করে দিতে পারে, সেক্ষেত্রে ইসকনের রথযাত্রা দিয়ে কী সম্ভব নয় ছোট একটি বাংলাদেশের সরকার পতনকে নিশ্চিত করা? একজনের স্ট্যাটাসে দেখলাম, ইসকনের মানববন্ধন থেকে নাকি অস্ত্র লাইসেন্স চাওয়া হয়েছে। আরে হিন্দুরা একটু ধৈর্য্য ধরো! সরকার তো তোমাদের হাতে লাঠি তুলে দিয়েছেই, বন্দুক তুলে দিতে আর কতোক্ষণ? তোমাদের এই ধৈর্য্যহীনতার কারণেই মুনতাসীর মামুনেরা তোমাদের উপর বিরক্ত।

তখন হিন্দুরা শুধু মোটরসাইকেল নয়, সাথে বন্দুক নিয়েও রথযাত্রা করবে। ফেসবুকের কল্যাণে সবাই জানেন যে, হিন্দুদের রথযাত্রার স্লোগান হলো ‘জয় জগন্নাথ’। ‘জয় জগন্নাথ’ স্লোগান নিয়ে গুজরাটের একটি ইতিহাস আমি আপনাদেরকে পড়ে শোনাবো পাঠকেরা, তাহলে বুঝতে পারবেন এসব রথযাত্রাকে উৎসাহ দেয়ার পরিণতি কী?

১৯৬৯-তে গুজরাটে ‘হিন্দু রক্ষা সমিতি’ গড়ে তার মাধ্যমে জোরালো আন্দোলন করার পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়।...১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করে হিন্দু ধর্ম রক্ষা সমিতির নেতারা শোভাযাত্রা করে সভার নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হয় এবং বেশ বড় এক জনসমাবেশে তীব্র মুসলমানবিরোধী বক্তৃতা দেয় ও স্লোগান উচ্চারণ করতে থাকে। সভা চলাকালীন সময়েই সমবেত হিন্দুদের একাংশ পাশের এক দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। ফায়ার ব্রিগেড আগুন নেভাতে এলে হিন্দুদের পাথর নিক্ষেপের ফলে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

উন্মাদ হিন্দুরা সড়ক যুদ্ধের ধরনে রাস্তা খুঁড়ে ব্যারিকেড খাড়া করে আক্রান্ত মুসলমানদের রক্ষা করতে দমকল বা পুলিশের আসা অসম্ভব করে তোলে।...হিন্দুর ভাড়াবাড়িতে মুসলমানদের দোকান থাকলে আগুন না ধরিয়ে কেবল লুট করা হয়। আর মুসলমান-হিন্দু যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা পেয়ে যায়। কোনো কোনো পাড়ায় আক্রমণকারীরা ভোটার তালিকা নিয়ে মুসলমানদের বাড়ি খুঁজে বের করে। মুসলমান উনাদের জ্বলন্ত বাড়ি ও দোকানগুলো দেখতে দাঙ্গাবাজ হিন্দু নারী-পুরুষরা মেলা দেখার মতো ভিড় জমায়। মুসলমানদের আর্তচিৎকার ছাপিয়ে ‘জয় জগন্নাথ’ রোল উঠে। কোথাও কোথাও দর্শকদের প্রসাদ বণ্ঠন করা হয়। কোনো কোনো পাড়ায় বিনষ্ট সম্পত্তি ও প্রাণভয়ে বিপন্ন মুসলমানদের ‘জয় জগন্নাথ’ বলতে বাধ্য করা হয় এবং ২০শে সেপ্টেম্বর জনৈক মুসলমান যুবক এই জবরদস্তির সম্মুখে আত্মসমর্পণ না করায় অমানুষিক মারধোরের পর আক্রোশপরায়ণ হিন্দুরা তাকে জীবন্ত দহন করে।

নিষ্ঠুরভাবে হত্যা ছাড়াও একাধিক মুসলমান শ্রমিককে জীবন্ত দগ্ধ করা হয় বা জ্বলন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। সম্ভ্রমহানি, বস্ত্রহরণ ও বিবস্ত্র অবস্থায় মুসলমান নারীদের পথ পরিক্রমা করতে বাধ্য করাসহ নারী নির্যাতনের এমনসব পৈশাচিক পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিল যার বর্ণনা দেয়া ভদ্ররুচির বিরুদ্ধ। (সূত্র: দাঙ্গার ইতিহাস: শৈলেশ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, পৃ. ৯০-৯৪)

Post a Comment

 
Top