সেক্যুলার ও কুকুর, এই দুই শ্রেণীর প্রাণী লাঠির ভাষা ছাড়া কিছু বোঝে না। মুখে মুখে ‘মুক্তমনা’র কথা বললেও সেক্যুলাররা শক্তিপ্রয়োগে মুসলমানদের নিঃশেষ করে দেয়ার নীতিতে বিশ্বাসী। মুসলমান যখনই তাদের প্রতি নরম হয়, তখনই তারা পেয়ে বসে।

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এরকম বহু নজির রয়েছে। শেষ মুঘল বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর সেক্যুলারিজম দেখাতে গিয়েছিলেন, হিন্দুদের মন জয় করতে সিপাহী বিদ্রোহের সময় দিল্লীতে গরু কুরবানী নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, বাহাদুর শাহ জাফরের সাধের দিল্লীকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে ব্রিটিশরা। তারই প্রিয় হিন্দুরা ব্রিটিশদের দালালি করে মুসলমানদের সরিয়ে দিল্লীতে আধিপত্য বিস্তার করে। শেষবয়সে তাকে বার্মার রেঙ্গুনে একাকী মৃত্যুবরণ করতে হয়, জন্মভূমির মাটি তার ভাগ্যে জোটেনি।

এরদোগান পূর্ববর্তী মুসলমানদের মতো ভুল করেননি, শুরুতেই কঠোর মনোভাব পোষণ করেছেন ইসলামবিরোধী নাস্তিক শ্রেণীটির প্রতি। কাফিরেরা সবসময় purge বা তাদের ভাষায় ‘শুদ্ধিকরণ’ এর উপর জোর দিয়ে থাকে, ক্ষমতায় আসলেই তারা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট পদগুলো থেকে বিতাড়িত করে সকল মুসলমানদের। ভারতে ব্রিটিশ আমলে প্রচুর মুসলমান সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ছিল, যাদের সবাইকেই সাতচল্লিশে ভারত স্বাধীন হওয়ার পরপরই বরখাস্ত করা হয়। ভারতীয় ইতিহাসবিদ গোলাম আহমাদ মোর্তজার ভাষায়-

“একদা কংগ্রেস আমলে উত্তরপ্রদেশে সরকারি চাকরিতে মুসলমান নিয়োগ বন্ধ ছিল। তৎকালীন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (উত্তরপ্রদেশের) রাজ্য বিধানসভায় এই তথ্য স্বীকার করেছে। প্রাক্তন প্রতিরক্ষা রাষ্ট্রমন্ত্রী মহাবীর ত্যাগী সংসদে স্বীকার করেছিল, স্বাধীনতার পর রেল, যোগাযোগ, পুলিশ ও প্রতিরক্ষা বিভাগে মুসলমানদের অনুপাত ৩২ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশ। বল্লভ প্যাটেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সার্কুলার জারি করেছিল, প্রশাসনের মূল এবং নিয়ন্ত্রক ক্ষেত্রগুলিতে যেন মুসলমানদের প্রবেশ না ঘটে।” (সূত্র: ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়, গোলাম আহমাদ মোর্তজা, বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশন, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৩৮)

বিধর্মীরা যদি সার্কুলার জারি করে মুসলমান বিতাড়িত করতে পারে, তাহলে এরদোগানও পারেন শক্তিপ্রয়োগে সেক্যুলারদের বিতাড়িত করতে। এ পর্যন্ত তুরস্কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছয় হাজারের বেশি সেক্যুলার সেনা সদস্যকে, ২ হাজার ৭০০ বিচারককে বরখাস্ত করা হয়েছে। কুকুরের জন্য মুগুর ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নেই, যা এরদোগানের মতো ব্যতিক্রমী কয়েকজন বাদে ৯৯ শতাংশ মুসলিম শাসকেরা বারবার বুঝতে ভুল করেছে। মিসরের মুরসি তার প্রশাসন থেকে সেক্যুলারদের দূর করার কঠোরতা দেখাতে পারেননি, ফলে সিসি এসে ক্ষমতা দখল করেছে।

আমাদের দেশে অনেকেই চায় সরকারের উৎখাত। কিন্তু সরকার চেঞ্জ হলেও ক্ষমতা মুসলমানরা ধরে রাখতে পারবে বলে মনে হয় না, কারণ বর্তমান সরকার টিকে রয়েছে হিন্দুদের উপরে। ধরা যাক এদেশে বর্তমান সরকারের পতন হলো, এরপর কী বাঙালি মুসলমানরা পারবে ঐসব হিন্দুদেরকে প্রশাসন থেকে বিতাড়িত করতে? হিন্দুরা ‘দাদা’ বলে একটা হাসি দিলেই তো বাঙালি মুসলমানদের দিল গলে নরম হয়ে যাবে, বিতাড়ন তো দূরের কথা। পরে উল্টো বাঙালি মুসলমানদের অবস্থা হবে মিশরের মুসলমানদের মতো।

এই ছেলেমানুষিই বাঙালি মুসলমানদের মৃত্যু ডেকে আনবে। এরদোগান কঠোর হতে পেরেছেন বলেই তিনি নিজের মাতৃভূমিতে থাকতে পেরেছেন। বিপরীতে বাহাদুর শাহ জাফর ও মুরসিরা কঠোর হতো পারেনি বলেই তাদেরকে বিতাড়িত হতে হয়েছে। বাঙালি মুসলমানরা এখন হয় কঠোর হবে, নইলে তাদেরকেও বিতাড়িত হয়ে সাগরে ভাসতে হবে ঠিক সিরিয়ার মুসলমানদের মতো।

Post a Comment

 
Top