গত কয়েকদিন ধরে জনকণ্ঠে প্রকাশিত হচ্ছে মুনতাসীর মামুনের কলাম “সংখ্যালঘুদের উদ্বেগ ও একরৈখিক চিন্তাভাবনা” নামে। লেখাটিতে হিন্দুদের বর্তমান কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনার কারণে তার ভক্তদের (হিন্দু ও নাস্তিক) অনেকেই মুনতাসীর মামুনের বিরোধিতা করছে, গালিগালাজও করছে। কিন্তু মুনতাসীর মামুন এসব বক্তব্য ইচ্ছা করে দেয়নি, বরং দিতে বাধ্য হয়েছে। তাই সে প্রথমেই বলে নিয়েছে যে, “এ প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছে আমার ছিল না, কিন্তু বাধ্য হয়ে লিখতে হচ্ছি। ” (http://goo.gl/786SuJ)

আমরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার কথা জানি। সম্মুখযুদ্ধে বারবার ব্রিটিশদের হারানোর পরও রাজসভার হিন্দুদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তাকে পলাশীর প্রহসনে রাজ্যচ্যুত হতে হয়। সিরাজ হিন্দুদের প্রচুর সুযোগসুবিধা ও বড় বড় পদ দিয়েও সন্তুষ্ট করতে পারেনি। উল্টো হিন্দুরা বড় বড় পদ পেয়ে ব্রিটিশদের কাছে গিয়ে মিথ্যা নালিশ জানানো শুরু করলো যে, সিরাজ তাদেরকে নির্যাতন করছে।

অতীতে সিরাজের হিন্দুতোষণের পর হিন্দুরা গিয়েছিল ব্রিটিশদের কাছে নালিশ করতে, আর বর্তমানে হাসিনার হিন্দুতোষণের পর হিন্দুরা যায় মোদির কাছে নালিশ করতে। অর্থাৎ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে এখানে। জনকণ্ঠের স্বদেশ রায় এ প্রসঙ্গে তার কলামে স্পষ্ট করেই লিখেছে- “রানা দাশগুপ্তের অসুবিধা সহজে বোঝা যায়। সে কুয়োর ব্যাঙ, সাগরে এসে পড়েছে। আসলে চট্টগ্রাম জজকোর্টের সাধারণ উকিল হঠাৎ করে শেখ হাসিনার বদান্যতায় জাতীয় রাজনীতি বা জাতীয় ফোরামে চলে এসেছে। এখন তাল সামলাতে পারছে না। গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে সে এ ধরনের কাজ করে চলছে।” (https://goo.gl/jM42JB)

এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সিরাজের ন্যায় শেখ হাসিনাও হিন্দুদের প্রতি এতোই বদন্যতা দেখাচ্ছে যে, ঢাকার বাইরের থার্ডক্লাস হিন্দু উকিলকেও একেবারে জাতীয় মঞ্চে নিয়ে আসছে। মুনতাসীর মামুন কিন্তু জনকণ্ঠের লেখায় বারবার বলেছে যে, শেখ হাসিনা হিন্দুদের ক্ষমতায়ন করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু বাংলাদেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করে হিন্দুদের ক্ষমতায়িত করাটা একটু সময়সাপেক্ষ তো অবশ্যই। কিন্তু হিন্দুরা ধৈর্য্য ধরতে রাজি নয়। তারা হাঁসের পেট কেটে একেবারে সব ডিম বের করতে চায়। হিন্দুদের জন্য এই সোনার ডিমপাড়া হাঁসটি হলো আওয়ামী লীগ নিজেই। এই আওয়ামী লীগের পেটই এখন হিন্দুরা কাটতে চায় একবারে সব ক্ষমতা হস্তগত করার জন্য।

কারণ এদেশের হিন্দুরা এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের মাইনাস টু ফর্মুলার অস্ত্র। খালেদাকে অনেক আগেই জাতীয় রাজনীতি থেকে মাইনাস করা হয়েছে, এবার হাসিনাকে মাইনাস করার পালা। এখানেই মুনতাসীর মামুনদের উদ্বেগ। সে বোঝে যে, যতোই হিন্দুতোষণ করা হোক না কেন, হিন্দুরা তার আপন হবে না কখনোই। আওয়ামী লীগ না থাকলে হিন্দুরা তাকে টিস্যুপেপারের মূল্যও দেবে না। ভারতের শাবানা আজমীর মতো সেলিব্রেটি পর্যন্ত মুসলমান হওয়ার কারণে যেখানে বাড়িভাড়া পায় না, সেখানে আওয়ামী লীগবিহীন হিন্দু রাজত্বে মুনতাসীর মামুনদের কী হবে তা বলাই বাহুল্য।

মুনতাসীর মামুন ইতিহাসের ছাত্র, তাই সে বুঝছে যে আওয়ামী লীগ ব্রিটেন আমেরিকার সামনে বড় গলায় কথা বললেও তাকে কোন এক প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করবে হিন্দুরা, যেভাবে সিরাজকে করা হয়েছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগের ন্যায় সিরাজও তখন সাদা চামড়াদের সামনে অনেক বীরত্ব দেখিয়েছিল, কিন্তু তারপরও হিন্দুদের চক্রান্তে ফেঁসে গিয়েছিল সে। একবিংশ শতাব্দীর পলাশীর প্রহসন তথা মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে পলাশীর প্রান্তরের স্ট্র্যাটেজিরই অনুসরণ করা হচ্ছে এখন, কারণ অতীতের সিরাজের মতোই বর্তমান আওয়ামী লীগ আজ আগাগোড়া হিন্দুপ্রীতিতে মশগুল।

Post a Comment

 
Top