চিত্র: পাঞ্জাবের সিরহিন্দে অবস্থিত হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহির রওজা শরীফ


আজ ১৪ই শাওয়াল শরীফ। ইমামে রব্বানী, মাহবুবে সুবহানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহির বিলাদত (আগমন) দিবস। ভারতবর্ষের মুসলমানদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যারা না আগমন করলে হিন্দুশ্বাপদে ভরপুর ভারতবর্ষে মুসলমানদের চিহ্নমাত্র থাকতো না। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হলেন তাদের অন্যতম একজন।

বলা বাহুল্য, মানুষ উনার সম্পর্কে কিছুই জানে না। পাঠ্যপুস্তকে শুধু পড়েছে, তিনি দ্বীন ই ইলাহীর বিরোধিতা করেছিলেন, ব্যস এটুকুই। কিন্তু দ্বীন ই ইলাহী কতোটা ভয়াবহ ছিলো, সেটা তো মানুষ জানে না। তাই তারা মনে করে, দ্বীন ই ইলাহীর বিরোধিতা করাটা বোধহয় ছোটখাটো কিছু।

আকবরের প্রণীত দ্বীন ই ইলাহীর কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
১) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবর খলিফাতুল্লাহ’ নামক মনগড়া কলেমা চালু করা
২) মুসলিম বালকদের খতনা বন্ধ করা
৩) মৃতদেহকে কবর দিতে হলে পা দুটি ক্বিবলামুখী করে দেয়া,
৪) গরু কুরবানী নিষিদ্ধ করা
৫) অসংখ্য মসজিদকে সরকারি গুদামঘর কিংবা হিন্দুদের মন্দিরে পরিণত করা

এখনকার দিনে ওবামা-পুতিনকে যতোটা ক্ষমতাশালী মনে করা হয়, বাদশাহ আকবর ছিলো সেই জমানায় তার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমতাশালী। এই দ্বীন-ই-ইলাহী প্রচলনের কারণে অনেক মুসলমান তখন নিজ ধর্ম রক্ষা করতে দিল্লী ত্যাগ করে বাংলা-বিহারে বসতি স্থাপন করেছিল বলে ইতিহাসে রয়েছে।

তবে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মূল পরিচয় হলো, তিনি উনার সময়ের মুজাদ্দিদ ও নকশবন্দিয়া-মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার ইমাম। শরীয়তের চার মাযহাবের ন্যায় ইলমে তাসাউফের চার তরীক্বা, ক্বাদিরিয়া, চিশতীয়া, নকশবন্দিয়া ও নকশবন্দিয়া তরীক্বার বর্ধিত রূপ নকশবন্দিয়া-মুজাদ্দিদিয়া। ক্বাদিরিয়া ও চিশতীয়া তরীক্বা এসেছে ৪র্থ খলীফা হযরত আলী রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তরফ থেকে, আর নকশবন্দিয়া ও নকশবন্দিয়া-মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা এসেছে ১ম খলীফা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তরফ থেকে্।

শেরশাহ যখন হুমায়ুনকে যুদ্ধে হারায়, তখন ‍হুমায়ুন ইরানের শিয়াদের সাথে চুক্তি করে রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য। যার ফলে মুঘলদের মধ্যে শিয়ারা নানাভাবে ঢুকে যায়। বিশেষ করে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুরজাহান শিয়া হওয়ায় তার সময়ে শিয়ারা সুন্নীদের অত্যাচার শুরু করে। শিয়াদের আক্বীদা হলো, হযরত আবু বকর রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাফির (নাউযুবিল্লাহ)। সে কারণে নুরজাহান, মন্ত্রী আসফ খা এদের মতো শিয়ারা মিলে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে কারাবন্দি করে, যেহেতু তিনি নকশবন্দিয়া মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার ইমাম হিসেবে প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহুর প্রতিনিধিত্ব করতেন।

কিন্তু জাহাঙ্গীরের রাজসভার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অধিকাংশই ছিলেন হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহির অনুসারী। যার ফলে জাহাঙ্গীরের অধীনস্থরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর তার ভুল বুঝতে পেরে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহির সাথে কারাগারে সাক্ষাৎ করে ক্ষমাপ্রার্থনার অনুরোধ করেন। তখন হযরত হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিম্নোক্ত শর্ত দেন-

(১) রাজ দরবারে তা’যীমী সিজদা প্রথা রহিতকরণ (২) সকল মসজিদের পুনঃনির্মাণ (৩) জিজিয়া কর পুনঃপ্রবর্তন (৪) পবিত্র ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালু করার জন্য কাজী ও মুফতী নিয়োগ (৫) সকল বিদয়াত কার্যকলাপ নিষিদ্ধকরণ; (৬) গরু যবেহ করার উপর নিষেধাজ্ঞা রহিতকরণ; (৭) সংস্কার আন্দোলনে সকল কারারুদ্ধ ব্যক্তিকে মুক্তিদান।

হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি যদি না আসতেন, তাহলে আজ উপমহাদেশে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের জায়গায় শিয়া ও হিন্দুদের রাজত্ব কায়েম হতো। বাদশাহ আকবরের দ্বীন ই ইলাহীকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করা না হলে আজকে আমরা আমাদের সন্তানদের খতনা করতে পারতাম না, আযান দিতে পারতাম না, মসজিদগুলো জোর করে মন্দিরে পরিণত করা হতো। মোটকথায় ভারতবর্ষে ‍মুসলমানদের কোন অস্তিত্ব থাকতো না।

বাদশাহ জাহাঙ্গীর ও তার পরবর্তী শাহজাহান ও বাদশাহ আলমগীর, উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন নকশবন্দিয়া মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার অনুসারী। মানুষ এসব ইতিহাস জানে না, যদিও এটাই হলো প্রকৃত অর্থে মুসলমানদের ইতিহাস। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী বর্তমান সময়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, কারণ বর্তমানেও আকবরের সময়ের ন্যায় হিন্দুতোষণ চলছে। মসজিদের জমি মন্দিরের নামে দাবি করা হচ্ছে।

হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সমস্ত প্রতিকুলতার মোকাবিলা করেছিলেন কেবল লেখালেখি করে, কোন অস্ত্রশস্ত্রের যুদ্ধে তিনি যাননি। আসলে আমাদের তো অস্ত্রের দরকার নেই, আমরা মুসলমানরা এদেশের জনগোষ্ঠীর ৯৮ শতাংশ। এদেশে নাস্তিক ও হিন্দুদের সংখ্যা এতোই কম যে, তাদের উপর দিয়ে হেঁটে গেলেই তো তারা পিষ্ট হয়ে মারা যাবে। কিন্তু তার জন্য সর্বাগ্রে দরকার চেতনার স্ফুরণ, আর কলম দিয়েই কেবল চেতনাকে জাগানো যেতে পারে।

Post a Comment

 
Top