গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে জাকির নায়েক নিয়ে যেসব মূল্যায়ন পড়লাম, সেগুলোর মধ্যে আমার নিকট সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানের লেখা পোস্টটি। তিনি লিখেছেন-

//মোদি সরকার ডাক্তার জাকির নায়েকের মতো বর্তমান সময়ে ভারতের জন্য এতো উপকারী একজন মানুষকে কেন অহেতুক বিতর্কীত করতে গেল? অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন কিভাবে ডাক্তার জাকির নায়েক মোদি সরকার এবং ভারতের মহা উপকারী মানুষ হলেন? তবে শুনুন: এক। ডাক্তার জাকির নায়েক তাঁর ইসলামীক রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও পিস টিভির মাধ্যমে বিশ্বময় প্রচার করছে ভারত সেকুলার , পরমত সহিষ্ণু সব ধর্মের ও মতের মানুষের সম্প্রতির একটি অসাম্প্রদায়ীক দেশ। যদিও ভারতে মুসলমানদের উপরে অত্যাচারের ষ্টিমরোলার চালানো হচ্ছে।// (https://goo.gl/yHeqCx)

মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান ভারতের জন্য এই বিষয়টিকে খুব পজিটিভ হিসেবে নিয়েছেন যে, জাকির নায়েকের কারণে বিশ্বসমাজের কানে ভারতীয় মুসলমানদের আর্তচিৎকার পৌঁছাচ্ছে না। মোদি সরকার অত্যাচারের স্টীমরোলার চালালেও জাকির নায়েক তার মিডিয়াকে ব্যবহার করে নির্যাতিত ভারতীয় মুসলমানদের পাশে দাঁড়াননি, প্রতিবাদ না করে সবসময় তিনি শান্তি শান্তি জপেছেন। বাল ঠাকরের ঘাঁটি মুম্বাইতে জন্মেও ইংরেজি ভাষায় গোটা বিশ্বে প্রচার করেছেন, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা (!) দেয়া হয়। (https://goo.gl/Ib4diY)

এতে করে মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মুসলমানরা মনে করছে যে, ভারতের মুসলমানরা বোধহয় খুব শান্তিতেই আছে! নির্যাতিত ভারতীয় মুসলমানদের পক্ষে গোটা বিশ্বে কোনপ্রকার জনমতই গড়ে উঠছে না। জাকির নায়েকের অনুসারীরা যে যা-ই যুক্তি দেখান, আমি মনে করি এটি কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

জাকির নায়েকের বিরোধিতা করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমার উদ্দেশ্য আত্মসমালোচনার ক্ষেত্র তৈরী করা। এই যে জাকির নায়েক এতো শান্তির কথা বললেন, কিন্তু তারপরও জাকির নায়েককে হিন্দুরা রেহাই দিয়েছে কী? গুলশানের বোমা হামলাকে কেন্দ্র করে যেভাবে তড়িঘড়ি করে ভারতে জাকির নায়েককে ব্যান করেছে মোদি সরকার, মনে যথেষ্ট বিষ না থাকলে তা সম্ভব নয়। বোঝাই যায় বিজেপি সরকার অনেকদিন ধরে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।

এতো শান্তির কথা বলেও তো জাকির নায়েক হিন্দুদের মন পেলেন না, উল্টো ফেসবুকে হিন্দুদের রীতিমতো উৎসব লেগে গেল পিসটিভি ব্যান হওয়াতে। “ইহুদী এবং খৃষ্টানরা কখনোই সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের ধর্মের অনুসরণ না করা হয়৷” (২:১২০) সুতরাং জাকির নায়েকও কখনোই কেবল শান্তির কথা বলে বিধর্মীদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন না, টিকে থাকতে হলে প্রতিবাদের ভাষা তাকে ব্যবহার করতেই হবে। গত কয়েকদিন ধরে মোদি সরকার ও ভারতীয় মিডিয়া জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে যা খুশি তা-ই বলে গিয়েছে, নিজ জন্মভূমি থেকে তাকে নির্বাসিত করা হয়েছে, অথচ এর বিপরীতে জাকির নায়েকের তরফ থেকে একটি বিবৃতিও আমরা এখন পর্যন্ত শুনিনি।

জাকির নায়েক বর্তমানে আফ্রিকায় অবস্থান করছেন, ভারতে নয়। সেখানে বসে তিনি তো পারেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে অন্তত একটি বিবৃতি দিতে, বিজেপি সরকারের মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে। তা তিনি করছেন না কেন?

আপনারা কিছু মনে করবেন না, আমাকে বলতেই হচ্ছে এটা ইসলাম নয়। ইসলাম অন্যায় দেখলে হাতে বাধা দিতে বলে, সম্ভব না হলে মুখে প্রতিবাদ করতে বলে। শুধু peace বা শান্তি শান্তি জপা মুসলমানদের কাজ নয়। ইসলামের নামে এইধরণের গান্ধীবাদী চর্চা জাকির নায়েক ও তার অনুসারীদের অবিলম্বে পরিহার করা উচিত নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই।

Post a Comment

 
Top