কিভাবে গুলশান হামলাকারীদের ব্রেনওয়াশ করা হলো, এ নিয়ে এখন সবাই জল্পনা-কল্পনা করছে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, এর রহস্য খুবই সোজা ও সিম্পল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমেরিকায় প্রায়ই বন্দুকধারীরা বিভিন্ন স্কুল ও প্রতিষ্ঠানে বন্দুক হাতে ঢুকে গুলি করে মানুষ হত্যা করে। কেন করে? কারণ তারা আমেরিকার বস্তুবাদী সমাজে বসবাস করতে করতে হতাশায় ভোগে এবং চারপাশের মানুষের প্রতি তাদের ভালোবাসা উঠে যায়।

২০১২-১৩ সালের দিকে ইউরোপীয় মিডিয়াগুলো আইএসকে মহৎ কিছু হিসেবে প্রচার করে ইউরোপের মুসলমান যুবকদের উদ্বুদ্ধ করেছিল তাতে যোগ দিতে। আমার পরিচিতি একজনের কাছে শুনেছি, ইউরোপের ভালো ভালো ধনী পরিবারের মুসলমান যুবকেরা তখন আইএসে যোগ দিয়েছিল। কারণ তারা বস্তুবাদী সমাজে বসবাস করতে করতে বীতশ্রদ্ধ ও জীবনের প্রতি হতাশ। জীবনের মায়া যেহেতু নেই, সেহেতু সিরিয়ায় গিয়ে আত্মঘাতী হতে তাদের বাঁধেনি।

ঠিক সেভাবেই এদেশের গুলশান-বনানীতে বসবাস করে, তাদের মানসিক অবস্থাও ভিন্ন কিছু নয়। এরাই হলো ‘আইএস’দের প্রধান টার্গেট। ‘আইএস’ কিন্তু বাংলাদেশে বসে কাজ করে না, বাংলাদেশে কোন আইএস নেই। বরং তারা বিদেশে বসেই অনলাইনে ধনীর দুলাল হতাশাগ্রস্ত যুবকদের খুঁজে বেড়ায় এবং তাদের সাথে চ্যাটিং এর মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এরপর আস্তে আস্তে তার হতাশাকে পুঁজি করে তাকে আত্মঘাতী হতে উদ্বুদ্ধ করে। মনোবিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী, হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে ব্রেনওয়াশ করা সোজা। কারণ তার কোন দৃঢ় অবলম্বন থাকে না, সে খড়কুটো ধরে হলেও বাঁচতে চায়।
আসুন দেখি কারা কারা কথিত আইএসে যোগ দিয়েছে
নায়লা নাইমের ডিভোর্সড স্বামী
ক্লোজআপ ওয়ানে গানের প্রতিযোগী
শ্রদ্ধা কাপুরের হাত ধরে নাচা তরুণ
স্কলাস্টিকা-নর্থসাউথের ছাত্র

ক্লোজআপ ওয়ানের গায়ক যুবকটাকে দেখে আমার পরিচিত এক ‘সংস্কৃতিবান’ ফ্যামিলির কথা মনে পড়ে যায়। রেজওয়ানা বন্যা মার্কা গান গাওয়া সেই ফ্যামিলির বাসার পুরোটা জুড়ে ছিল তবলা-তানপুরা-হারমোনিয়াম। দেয়ালে ঝোলানো বিবি রাসেল মার্কা ওয়াল ম্যাট, শোপিস হিসেবে সারা বাড়িতে মাটির পুতুল। পরিবারের মা ও দুই মেয়ে নাচগানের সাথে জড়িত।

সেই পরিবারের মধ্যবয়স্ক গৃহকর্ত্রী মতো তার স্বামীকে ছেড়ে বিয়ে করেছিল আরেক যুবককে। সুবর্ণা মুস্তফা যেভাবে হুমায়ুন ফরিদিকে ছেড়ে আরেক যুবককে বিয়ে করেছিল, ঠিক সেভাবেই । তার স্বামী এখন বৃদ্ধ বয়সে একা একটি বাড়িতে দিন কাটায়।

ঐ বৃদ্ধ স্বামীর জায়গায় যদি কোন যুবক হতো? সেক্ষেত্রে সহজেই তার হতাশাকে পুঁজি করে তাকে আত্মঘাতী হতে উদ্বুদ্ধ করা যেতো। এরকম যুবক বর্তমানে এদেশে কম নয়, কারণ বস্তুবাদের প্রকোপ এদেশে বাড়ছে। বাড়ছে ডিভোর্সড কিংবা ব্রেকআপ হওয়া হতাশাগ্রস্তু যুবকদের সংখ্যা, যাদের কিনা সমাজের আর দশটা মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ নেই। এরাই পারে রেস্টুরেন্টে বোমা হামলা করে সাধারণ মানুষ মারতে।

এতো গেল ব্রেনওয়াশের একটি দিক, যারা বস্তুবাদী ইউরোপীয় লাইফস্টাইল লীড করে হতাশায় ভুগছে তাদেরকে আইএস সন্ত্রাসী কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু যেই যুবকটি নিচুতলা থেকে উঠে এসে ইউরোপীয় লাইফস্টাইল লীড না করতে পারার কারণে হতাশায় ভোগে, তাকেও কিন্তু ব্রেনওয়াশ করা হয়। তাকে ব্রেনওয়াশ করে সন্ত্রাসী নয়, বরং নাস্তিক বানানো হয়।

যেমন ধরা যাক আসিফ মহিউদ্দীনের কথা। সে তার দুলাভাইয়ের বাসায় আশ্রিত থেকেছে। সে ইউরোপের পাকা পায়খানায় হাগতে চায়, কিন্তু তার দরিদ্র হওয়ায় তা সম্ভব নয়। এ নিয়ে সে হতাশ।
তাই তাকে বোঝানো হলো, তুমি ইসলামের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দাও। তোমার পাকা পায়খানার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

মুফাসসিল ইসলাম, ওয়াইফ কর্তৃক ডিভোর্সড। তার ব্রিটেনের ভিসা যায় যায় অবস্থা। তার ভিডিও দেখে বোঝা যায়, লোকটার মাথায় সমস্যা আছে।

তাকে বোঝানো হলো, তুমি ইসলামের বিরুদ্ধে ভিডিও ক্লিপ ছাড়ো। তোমার ভিসার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
শাহবাগে ফুটপাতের টোকাই মেয়েটা মফস্বল থেকে উঠে এসেছে। দেশী মদ আর গাঁজার ব্যবস্থা করতেও তার খুব কষ্ট হয়। বিদেশী মদের লোভ তার অনেকদিনের।

তাকে বোঝানো হলো, তুমি জঘন্য আজাদকে চুমু খাও। তোমার স্কচ হুইস্কির ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

অর্থাৎ এই বস্তুবাদই হলো পশ্চিমাদের মূল অস্ত্র, যাকে মাছধরার জালের মতো ব্যবহার করে মুসলমান সমাজ থেকে সন্ত্রাসী ও নাস্তিক পয়দা করা হয়। এদেরকে পরস্পর বিরোধী ভাবার কোন কারণ নেই, যেহেতু দুটোকেই আমেরিকা সৃষ্টি করেছে মুসলমান দেশে অরাজকতা তৈরী করার জন্য। নাস্তিকরাই বরং মনে মনে চায়, সন্ত্রাসীরা এদেশে বারবার হামলা করুক। কারণ একেকটি হামলার পরপরই নাস্তিকেরা নতুন করে অনলাইনে ইসলাম বিরোধিতার ইস্যু পেয়ে যায়।

এই বস্তুবাদকে ঠেকাতে হলে আমাদের শিক্ষা সিলেবাসকে এমনভাবে ইসলামীকরণ করা দরকার, যেন তা আধ্যাত্মিকতার উন্মেষ ঘটায়। যা মুসলমান হিসেবে আমাদের সন্তানদের দৃঢ় চেতনার বিকাশ ঘটায়। কারণ একজন মুসলমান যদি তার মুসলমান পরিচয়ের প্রতি দৃঢ় হয়, সেক্ষেত্রে তার হতাশ হওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না। আর হতাশ না হলে তাকে সন্ত্রাসী কিংবা নাস্তিক বানানোও কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

Post a Comment

  1. দাদা আপনার লেখার তুলনা হয়না ।।। আপনার মত একজন লেখকের সন্ধান পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। ।।। আল্লাহ্ আপনার সহায়তা করুন ।। লেখালেখিতে ।।। চালিয়ে যান ।। আপনার আছেন বলে আমরা একটু সত্য জানতে পারি ।। ভাল থাকবেন ।।। মনে রাখবেন আপনার লেখা হাজার হাজার পাঠক পড়ে ।।

    ReplyDelete

 
Top