বাংলাদেশে বর্তমানে গুলশান হামলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে পুরোহিত হত্যা, সবকিছুর পেছনে উদ্দেশ্য প্রমাণ করা এদেশে ‘আইএস’ আছে, যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে বিদেশী আগ্রাসন চালানো। অথচ এই ‘আইএস’ এর জন্মইতিহাস পড়লে সবাই একমত হবেন, যদি ‘আইএস’ এর দায়ে কোন জায়গায় সৈন্য পাঠাতে হয়, সেক্ষেত্রে তা করা উচিত আমেরিকা ও ইউরোপে।

২০১২-১৩ সালের দিকে আমেরিকা-ইউরোপ যে কিভাবে অস্ত্র দিয়ে এবং প্রোপাগাণ্ডা চালিয়ে আইএস তৈরী করেছিল, তা এখনো পুরাতন খবরগুলোতে পাওয়া যায়। যেমন ২০১৩ সালের জুন মাসে ইউএসএ টুডে-তে খবরের শিরোনাম ছিল-

Obama approves arming Syrian rebels (http://goo.gl/aUR5fE)

অর্থাৎ ওবামা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অস্ত্র সাহায্য দিতে সম্মত হয়েছে। বিবিসিতে ২০১৩’র মে মাসের আরেকটি খবরের শিরোনাম ছিল-

EU ends arms embargo on Syria rebels (http://goo.gl/ghfwuH)

অর্থাৎ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তাদের ‘আর্মস এমবার্গো’ অর্থাৎ অস্ত্রবিরতি তুলে নিয়েছে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সাহায্য করার জন্য। শুধু অস্ত্রবিরতি তুলে দিয়ে নয়, বরং মিডিয়া প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েও তখন আইএস সদস্য রিক্রুট করতে ভূমিকা রেখেছিল পশ্চিমারা। সিরিয়ার বাশার আল আসাদ রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালিয়েছে, এই ‘প্রচারনা যুদ্ধ' তখন চালানো হয়েছিল সিরিয়ায় অস্ত্র সাহায্য পাঠানোর বৈধতা দেয়ার জন্য। (http://goo.gl/T8dZ52)

উল্লেখ্য, গুলশান হামলায় সিএনএনের ১৩ ঘণ্টা টানা লাইভ ব্রডকাস্টও কিন্তু ‘প্রচারণা যুদ্ধে’র মধ্যে পড়ে, যার লক্ষ্য বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলা।

২০১৩ সালের দিকে ইউরোপের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলো এমনসব ভিডিও ডকুমেন্টারী তৈরী করে প্রচার করতো, যেন ইউরোপের মুসলমান যুবকেরা সিরিয়ায় আইএসে যোগ দিতে আগ্রহী হয়। ব্রিটেনের ‘চ্যানেল ফোর’ এ প্রচারিত এই ডকুমেন্টারীটি দেখলে আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন, যে বর্তমানে আইএসকে সারাক্ষণ গালি দেয়া পশ্চিমা মিডিয়া তখন তাদেরকে কতোটা পজিটিভ ভাবে তুলে ধরেছিলো মুসলমান যুবকদের বিপথগামী করতে। (https://youtu.be/5hAlKlQ2g1Q)

আসলে মিডিয়া বিধর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এরা যেভাবে মুসলমানদের নিয়ে খেলছে, তা বড়ই মর্মন্তুদ। যেভাবে পশ্চিমারা শুরুতে ‘আইএস’কে পজিটিভ ভাবে তুলে ধরে ইউরোপের মুসলমানদের সিরিয়া যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল, ঠিক উল্টোভাবে সমুদ্রে নিহত আয়লানের ছবি দিয়ে এই পশ্চিমা মিডিয়াই সিরিয়ার মুসলমানদের ইউরোপে নিয়ে এসেছিল। এরপর হঠাৎ একদিন প্যারিসে হামলা হলো, পশ্চিমা মিডিয়াও তার ভালোমানুষি ছেড়ে নখদাঁত বের করে আসল রূপে আবির্ভূত হলো। ইউরোপে যাওয়া মুসলমানদের জীবন রীতিমতো নরক হয়ে উঠলো।

তখন পশ্চিমারা সিরিয়ায় আইএসকে সাহায্য করতে অস্ত্রবিরতি তুলে দিয়েছিল, মিডিয়া প্রোপাগাণ্ডা করেছিল আইএস সদস্য রিক্রুটের জন্য। যারা তখন আইএস তৈরী করেছিল, তারাই এখন আইএসের দায় চাপাচ্ছে বাংলাদেশের উপর। এদের এই ‘দোষারোপ’ যে কতোটা ভয়াবহ, সেটা সিরিয়া ও ইরাকের দিকে তাকালে বোঝা যাবে। আমেরিকা প্রথমে ইরাককে মিথ্যা দোষ দিয়েছিল ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের, এর মাধ্যমেই সে ইরাক হামলার পথ খুঁজে নিল। সিরিয়ার বাশারকে দোষ দিল রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের, এর দ্বারা সে সিরিয়ায় হামলার পথ খুঁজে নিল। এখন সে দোষ দিচ্ছে বাংলাদেশকে, যেন সে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।

এই দোষারোপের জবাব দেয়ার জন্য এখন সরকারের দরকার শক্তিশালী মিডিয়া। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের মিডিয়া শক্তিশালী হলেও তা এখন লীগের নিয়ন্ত্রণে নেই। আওয়ামী লীগ তার শাসনামলের শুরুতেই বামপন্থীদের বিশ্বাস করে মিডিয়া ও শিক্ষাব্যবস্থা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল, যার ফল এখন তারা হাতেনাতে পাচ্ছে গুলশান হামলায় মিডিয়ার বিট্রেয়ালের মাধ্যমে।

#বাংলাদেশে_কোন_আইএস_নেই
#No_IS_in_Bangladesh

Post a Comment

 
Top