শ্বেতাঙ্গিনী মহিলা বিয়ে করে পাকাপাকিভাবে ইংল্যান্ডে থেকে যাও, এই প্রস্তাবের বিপরীতে উপরের জবাবটি দিয়েছিলেন এই বাংলারই এক মুসলমান। ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডে গমনকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন বাংলার মেদিনীপুরের মির্জা শেখ ইতিসামউদ্দীন, যিনি ১৭৬৫ সালে দিল্লীর বাদশাহর চিঠি নিয়ে ইংল্যান্ডের রাজার নিকট দূত হিসেবে গমন করেন।

 ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পরাজয়ের পর বাংলা ইংরেজদের দখলে যায়, কিন্তু ইংরেজদের ছিল না কোন প্রশাসনব্যবস্থা, আইনব্যবস্থা, অর্থব্যবস্থা। ফলশ্রুতিতে পূর্ববর্তী মুসলিম নবাবদের আমলের মতোই ব্রিটিশরা প্রশাসনে ফারসী ভাষা ও বিচারবিভাগে মুসলিম কাজীদের এজলাস বহাল রাখতে বাধ্য হয়। যার ফলে প্রশাসনে পূর্বের ন্যায়ই মুসলমানদের আধিপত্য বজায় থাকে।

ওদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হয়ে ভারতবর্ষে এসে চাকরি করতে আগ্রহী ছিল বহু ইংরেজ, কিন্তু তারা কেউই ফারসী ভাষা জানত না। তাই মির্জা ইতিসামউদ্দীনকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল “বর্তমানে ফিরিঙ্গিস্তানে ফারসি অভিজ্ঞ লোক একজনও নেই; অনেক গণ্যমান্য লোক আপনার কাছে ফারসি শিখতে চায়। সুতরাং আপনি ইংল্যান্ডে থেকে যান। আপনি যদি একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে চান তাও আমরা ইংরেজরা আমাদের শ্বেতাঙ্গিনী মহিলাদের মধ্য থেকে আপনাকে ব্যবস্থা করে দেব।”

কিন্তু মির্জা ইতিসামউদ্দীন ইংল্যান্ডে থাকেননি, তিনি ফিরে এসেছিলেন বাংলায় মেদিনীপুরে তার নিজস্ব আবাসে। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘বিলায়েতনামা’ নামে তিনি ফারসি ভাষায় বই রচনা করেছিলেন, যেখানে তিনি সাদা চামড়ার মহিলা দিয়ে প্রলোভন দেখানোর উপরোক্ত ঘটনাটি তুলে ধরেছেন।

আমাদের পাঠ্যপুস্তকে আমাদেরকে শেখানো হয়, মুসলমানরা ইংরেজি না শিখে ভুল করেছে। আসলে এইসব নকলনবিশ ইতিহাসবিদদের নিজস্ব চিন্তাশক্তি বলতে কিছুই নেই, হিন্দু আর ইংরেজ লেখকরা সত্যমিথ্যা মিশ্রিত করে যা লিখেছে, সেটাই কপিপেস্ট করে চালিয়ে দেয়। আপনারাই বলুন পাঠকেরা, যেই ফারসী ভাষা শিক্ষার বিনিময়ে ইংরেজরা মির্জা ইতিসামউদ্দীনকে একাধিক সাদা চামড়ার স্ত্রী গছিয়ে দিতে চাইলো, সেটা বাদ দিয়ে মুসলমানরা কেন অন্য ভাষা গ্রহণ করবে? ব্রিটিশরা বুঝেছিল যে, মাদরাসা শিক্ষা ও ফারসী ভাষায় চালিত প্রশাসনব্যবস্থা না বাতিল করলে তারা কখনোই ভারতবর্ষে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না। মুসলমানদের মুখাপেক্ষী হয়েই তাদেরকে থাকতে হবে। ফারসী ভাষা ছিলো বাংলা ও পাক-ভারত উপমহাদেশে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্বের মূল হাতিয়ার। সেই শ্রেষ্ঠত্ব আমাদের পূর্বপুরুষেরা হারাতে চাননি বিধায় তারা ইংরেজি শিক্ষার বিরোধিতা করেছিলেন, দ্যাটস ইট।

মূর্খরা এর মধ্যে দোষত্রুটি খুঁজতে চেষ্টা করলেও ইতিহাস জানার কারণে আমি তা কখনোই করবো না। কারণ আমি মুসলমান, অস্তিত্বসচেতন এক বাঙালি মুসলমান, যে তার পূর্বপুরুষের ইতিহাস জানে।

বাংলাপিডিয়া লিঙ্ক: http://goo.gl/LShkMh

Post a Comment

 
Top