গেণ্ডারিয়ায় মসজিদ উৎখাত নিয়ে ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, প্রচুর লেখালেখি ও বলাবলি হয়েছে। কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না, তা হলো কেন এইধরণের ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে? নেপথ্যের মূল কারণ চিহ্নিত করতে হবে, বুঝতে হবে গোটা ভারতবর্ষের মুসলমান সমাজে হাজার বছর ধরে বয়ে চলা ব্যাধিটির স্বরূপ।

যারা ভিডিওটি দেখেছেন তারা সকলেই লক্ষ্য করেছেন, গেন্ডারিয়ার মুসল্লীরা ভিডিওতে শেষে বারবার একটি কথা বলেছে, হিন্দুরা রাস্তা বন্ধ করে পূজা করে, আমরা কিছু বলিনা। হিন্দুরা পূজায় জোরে গান বাজিয়ে আমাদের ঘুম নষ্ট করে, আমরা কিছু বলিনা। এমনকি হিন্দুরা রাস্তার উপর মন্দির বানিয়ে লোকজনের চলাচলের রাস্তা পর্যন্ত স্থায়ীভাবে আটকে দেয়, তারপরও আমরা কিছুই বলিনা! (https://youtu.be/PC-3nz1DdSI)

আমার পূর্বের পোস্টে সালেহীন তুষার নামে একজনের মন্তব্য-“ভাই আমি পুরান ঢাকা থাকি.....আপনি পুরান ঢাকায় থাকলে দেখতেন পুজার সময় এরা কি করে...এত জোরে গান বাজায় রাত ২টা পর্যন্ত যে ঘরের গ্লাস এমন কি মেঝে পর্যন্ত নড়ে। রাস্তা বন্ধ করে দেয়, আমার অসুস্থ দাদাকেও রিক্সা নিয়ে যেতে দেয় নি। তারপরেও মুসলমান কিছু বলে না।একবার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়া কালে এক হিন্দু ছেলে বলেছিল 'ধুর তোদের বালের আল্লাহ' তখন ক্লাস ৭ এ পরতাম বুঝি নাই।।এখন বুঝি হিন্দু কি জিনিস.....”

অর্থাৎ সবারই এক কথা, আমরা হিন্দুদেরকে কিছু বলি না। মণ্ডপ বানিয়ে রাস্তা বন্ধ করে অসুস্থ লোককে না যেতে দিলেও আমরা হিন্দুদেরকে কিছু বলি না। হিন্দু টিচার মুসলমান ছাত্রী রেপ করলেও কিছু বলি না। এই না বলাটাই হলো হাজার বছর ধরে চলে আসা ভারতবর্ষের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দোষ, সবচেয়ে বড় ভুল।

এ প্রসঙ্গে বাংলার স্বাধীন সুলতান হযরত গিয়াসউদ্দীন আযমশাহ রহমতুল্লাহি আলাইহির ইতিহাস তুলে ধরতে হয়। ইতিহাসে তিনি বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন ধার্মিকতা ও সূফী দরবেশদের সাথে সুসম্পর্কের জন্য।

উনার সময়ে যখন হিন্দুরা মাথাচাড়া দিতে শুরু করে, তখন উনার বন্ধুস্থানীয় সূফী-দরবেশরা উনাকে সাবধান করতে থাকেন। বাদশাহ গিয়াসউদ্দীন আযমশাহর বন্ধু মুজাফফর শামস বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি হজ্জ করতে যাওয়ার আগে চিঠি লিখে সাবধান করে যান হিন্দুদের ব্যাপারে। কিন্তু বাংলার মুসলমানদের মনে গতানুগতিক হিন্দুপ্রীতির কারণে বাদশাহর সভাসদরা বিষয়টির গুরুত্ব দিলো না। তারা  উনাকে পরামর্শ দিলো, জাঁহাপনা থাক না, হিন্দুরা আর আমাদের কী করতে পারবে?

বাদশাহ সভাসদদের কথা শুনে হিন্দুর বিষয়টিকে ছাড় দিলেন। এর ফলাফলও হাতেনাতেই পাওয়া যায়, হযরত গিয়াসউদ্দীন আযমশাহ রহমতুল্লাহি আলাইহির অধীনস্থ এক হিন্দু অমাত্য গণেশের চক্রান্তে উনাকে শহীদ হতে হয়। সিংহাসনে বসেই সে মুসলিম জনসাধারন এর উপর অত্যাচার শুরু করে, শহীদ করে শায়খ বদরুল ইসলাম, শায়খ আনওয়ার ও শায়খ জাহিদ সহ অনেক মুসলিম আউলিয়া-কেরাম কে। মাত্র চার বছর ১৪১৪-১৪১৭ খ্রিষ্টাব্দের শাসনকালের মধ্যেই গণেশ এই বিশাল হত্যাকান্ড চালিয়ে বাংলার মুসলমানদের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে।

বাংলার মুসলমানদের ইতিহাসের সেখানেই পরিসমাপ্তি ঘটতো, যদি এই ‘না বলা’ দলের বিপরীতে কোন বাকশক্তিসম্পন্ন দলের অস্তিত্ব না থাকতো। এই দলটিই হলো আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের দল। বাংলায় তখন চিশতীয়া সিলসিলার মূল আউলিয়া ছিলেন হযরত নূর কুতুবে আলম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি গণেশের এই অত্যাচারের প্রতিবাদ করলেন। সাথে সাথে ভারতবর্ষের অন্যান্য জায়গায় চিঠি লিখলেন, যেন বাংলার বাইরে থেকে অন্য কোন মুসলমান বাদশাহ বাংলা আক্রমণ করে গণেশকে উৎখাত করেন।

হযরত নূর কুতুবে আলম রহমতুল্লাহি আলাইহির আহবানে সাড়া দিলেন উত্তরপ্রদেশের মুসলিম শাসক ইবরাহীম শর্কী, যার ফলে গণেশ সিংহাসনচ্যুত হয় এবং বাংলায় মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষা পায়। অর্থাৎ হযরত গিয়াসউদ্দীন আযমশাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি কিছু বলেননি বলেই তিনি হলেন শহীদ, বিপরীতে হযরত নূর কুতুবে আলম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন বিধায় তিনি নিজে বাঁচলেন, গোটা বাঙালি মুসলমান জাতিকে বাঁচালেন।

ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, ভারতবর্ষে মুসলমানদের বাঁচতে হলে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বলতেই হবে।  বাংলার মুসলমানদের এখন উচিত হযরত নূর কুতুবে আলম রহমতুল্লাহি আলাইহির ন্যায় একজন নেতার সন্ধান করা, যিনি এই কঠিন সময়ে আমাদেরকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বলাটা শেখাতে পারেন। এই ভারতবর্ষ শ্বাপদসংকুল, এখানে হিন্দুরা পদে পদে মুসলমানদের ছিঁড়ে খেতে উদ্যত। বোবা হওয়ার অর্থই হলো এখানে বেঘোরে প্রাণ হারানো, আর হিন্দুপ্রীতির অর্থ এখানে আত্মহত্যা ছাড়া কিছু নয়।

Post a Comment

 
Top