পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের তরফ থেকে প্রায়ই কতগুলো গৎবাঁধা বুলি শোনা যায়, তা হলো তাদের নাকি বাংলাদেশের প্রতি অনেক টান! অনেকেই ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করে, দাও দুই বাংলা এক করে দাও। পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশের মাঝখানের কাঁটাতারটা দেখতে আর ইচ্ছা করে না।

সম্প্রতি ঈদের দিনে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসীদের ব্যর্থ অপারেশনকে কেন্দ্র করে ভারতীয় পত্রিকাগুলোর খোঁচাখুঁচি এখনো বন্ধ হয়নি। কিশোরগঞ্জে জন্ম নেয়া কলকাতার এক ইংরেজি ভাষার লেখক হলো নীরদচন্দ্র চৌধুরী ওরফে নীরদ সি চৌধুরী, যার ছেলে ধ্রুবনারায়ণ চৌধুরী কিশোরগঞ্জ নিয়ে একটি আবেগপ্রবণ লেখা লিখেছে আনন্দবাজার পত্রিকায়। “বাবা বলতেন, কিশোরগঞ্জ ভালবাসার আশ্রয়” শিরোনামের লেখায় ধ্রুবনারায়ণ চৌধুরী লিখেছে-

“কিশোরগঞ্জে মুসলিমদের মধ্যে একে অপরকে আক্রমণ তো দূরের কথা, হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যেও কোনও সমস্যার কথা শুনিনি কখনও। গল্প বলতে বলতে বাবা অনেক সময় খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তেন। বলতেন, ‘‘কিশোরগঞ্জ হলো ভালবাসার জায়গা। ওখানে মানুষ মানুষকে বড় বেশি বিশ্বাস করে...।’’  (http://goo.gl/3f4CYD)

ধ্রুবনারায়ণ চৌধুরী দাবি করেছে, তার বাবা নীরদ সি চৌধুরী নাকি তাদের কাছে গল্প করতো, কিশোরগঞ্জে মুসলমান আর হিন্দুদের মধ্যে কোন সমস্যা ছিলো না। কিশোরগঞ্জ নাকি ভালোবাসার জায়গা! অথচ নীরদ সি চৌধুরী যে বইটি লেখার কারণে খ্যাতি অর্জন করেছিল, সেই ‘দি অটোবায়োগ্রাফি অফ এন আননোন ইন্ডিয়ান’ বইতে সে উল্লেখ করেছে-

Trunkfuls of pistols and ammunition had been passed from house to house; swords, spears, and even bows and arrows had been collected in large quantities. Every hindu house would have been defended by men practiced in arms, and blood would have flowed had there been a clash.

অর্থাৎ কিশোরগঞ্জের প্রত্যেক হিন্দুবাড়িতে হাতে হাতে ট্রাঙ্কভর্তি পিস্তল এবং গুলি পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। তাছাড়া ব্যাপক পরিমাণে যোগাড় করা হয়েছিল তলোয়ার, বল্লম এমনকি তীরধনুক। প্রত্যেক হিন্দুবাড়ির পুরুষেরা মুসলিম নিধনের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিল এবং রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়ার শপথ নিয়েছিল। (এই লিঙ্কের https://goo.gl/vX7xWO ২৩১ ও ২৩২ পৃষ্ঠায় দেখুন)

নীরদ সি চৌধুরী তার উক্ত বইতে আরো লিখেছে, কিশোরগঞ্জের হিন্দু ছাত্ররা স্কুলে কোন মুসলমান ছাত্রকে তাদের পাশে বসতে দিতো না। হিন্দু শিশুরা টিচারের কাছে অভিযোগ করতো, মুসলমান সহপাঠীদের গা থেকে নাকি পেঁয়াজ-রসুনের গন্ধ বের হয়।

চিন্তা করুন পাঠকেরা! যেই নীরদ সি চৌধুরীর বইতে লেখা রয়েছে কিশোরগঞ্জের মুসলমানদের গলা কাটার কথা, মুসলমান সহপাঠীদের দূরে ঠেলে দেয়ার কথা, তার ছেলে এখন পত্রিকার কলামে দাবি করছে যে হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক নাকি খুবই ভালো ছিল। আসলে হিন্দুরা যে বগলের তলে ইট রাখে আর সামনে সামনে ভালোমানুষি দেখায়, তা এতেই প্রমাণিত হয়।

আমার সন্দেহ হয়, কিশোরগঞ্জের হামলাটা নিশ্চয়ই ‘র’ করেছে। কারণ সিআইএ করলে সেটা ‍গুলশান হামলার মতোই চৌকস হতো, র করেছে বলেই হামলাটি ব্যর্থ হয়েছে। তারচেয়ে বড় কথা, কিশোরগঞ্জ নিয়ে এখন বাংলাদেশে কেউ কোন আলোচনা করছে না, কিন্তু ভারতীয় পত্রিকা ঠিকই ইনিয়ে বিনিয়ে কলাম ছেপে যাচ্ছে, খুব বেশি সমবেদনা দেখাচ্ছে। অর্থাৎ চোরের মন পুলিশ পুলিশ। উদ্দেশ্য ভারতীয় ধ্বজভঙ্গ সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো, যারা চীন ও পাকিস্তানের সাথে গোলাগুলিতে অহরহ মারা যায়।

Post a Comment

 
Top