হবুচন্দ্র রাজার কাহিনী আমরা সবাই জানি। পায়ে যেন ধুলা না লাগে, সে জন্য সারা রাজ্য ঝাড়ু দেয়ার আদেশ জারি করেছিল সে। তাতে করে সারা রাজ্য ‍ধুলায় অন্ধকার হয়ে গেল, কিন্তু সমস্যার সুরাহা হলো না। শেষে সমস্যার সমাধান দিল এক মুচি, পায়ে জুতা পরলেই তো আর ধুলা লাগে না।

বাংলাদেশে যদি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ না করে কেবল সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণের পলিসি নেয় সরকার, তাহলেও তা হবে হবুচন্দ্র রাজার মতোই। এদেশের প্রত্যন্ত অজপাড়াগাঁয়ের কোন এক মন্দিরের পুরোহিতকে কেউ যদি টার্গেট কিলিং করে, সেটা কখনোই ঢাকা শহরে বসে প্রেডিক্ট করা কিংবা বন্ধ করা সম্ভব নয়। যেভাবে হবুচন্দ্রের পক্ষে সম্ভব হয়নি সারা রাজ্য থেকে ধুলা ঝাঁট দিয়ে সরাতে।

সরকার যেটা করতে পারে, সেটা হলো মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা। গুলশানে ২০ জন হত্যা হোক কিংবা মফস্বলের পুরোহিত হত্যা হোক, সেগুলো সরকারের চাপের কারণ হওয়ার মূল কারণ মিডিয়ার দৌরাত্ম্য। এদেশে প্রতিদিন থানা-উপজেলা পর্যায়ে বহু লোক খুন হয়, আমাদের নিকট তার কোন খবরই এসে পৌঁছায় না। কিন্তু কোন ঠাকুর মরলে সেই খবর এসে পৌঁছায়, সেটা সরকারের মাথাব্যাথার কারণ হয়। কারণ মিডিয়ার টার্গেট হলো মন্দিরের ঠাকুর, সাধারণ মানুষ নয়।

অনেকক্ষেত্রে ভিন্ন ধরণের টার্গেট ঠিক করে সেটা নিয়ে গোটা দেশ তোলপাড় করে মিডিয়া। যেমন তনুর কথা ধরা যাক, তার হিজাবপড়া ছবিটি প্রচার করে সারাদেশের পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার জন্য মিডিয়া দায়ী।

সবকিছুর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। কারণ সরকার হলো রুশপন্থী, বিপরীতে মিডিয়া হলো সিআইএপন্থী। এই সিআইএপন্থী মিডিয়া যেসব চাল চালছে, তাতে করে সরকার এক দিক দিয়ে বন্ধুহারা হচ্ছে, অন্যদিক দিয়ে নাস্তিকতার কালি তার গায়ে লাগছে। উদাহরণস্বরূপ, সেলিম ওসমানের ঘটনায় সরকারের শ্যামল কান্তির পক্ষে যাওয়ার জন্য মিডিয়া অনেকাংশে দায়ী। এতে করে একদিক দিয়ে ওসমান পরিবারের মতো পরীক্ষিত মিত্রের সাথে সরকারের সম্পর্ক খারাপ হলো, অন্যদিক দিয়ে শ্যামল কান্তির পক্ষ নেয়ায় তার গায়ে নাস্তিকতার কালি লাগলো।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করার যে রায়, সেটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল এক হিন্দু পুরোহিত মারার কারণে। সেই হিন্দু পুরোহিত হত্যাকে হাইলাইট করেছিল মিডিয়া। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হলে যে সরকারের পতন হতো, সেটা মুনতাসীর মামুনও তার জনকণ্ঠের কলামে স্বীকার করেছে।

অর্থাৎ সরকার বুঝুক বা না বুঝুক, বর্তমানে এদেশে সব অস্থিতিশীলতার পেছনে মূল কলকাঠি নাড়ছে মিডিয়া। তারাই সাপ হয়ে কাটে, ওঝা হয়ে ঝাড়ে। গুলশান হামলার পেছনে যে মিডিয়ার হাত রয়েছে, সেটা জনগণের নিকট অনেকটা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। তদন্ত করলে পুরোহিত হত্যার পেছনেও এদের যোগসাজশ স্পষ্ট হবে। সুতরাং এখন হবুচন্দ্রমার্কা পলিসি বাদ দিয়ে সরকার জুতা পড়ুক, বামপন্থী ঘরের শত্রু বিভীষণ মিডিয়াগুলোকে অবিলম্বে এদেশে নিষিদ্ধ করুক।

Post a Comment

 
Top