ব্রিটেনের সো কল্ড রানির জন্য কেক বানিয়ে এখন বাংলাদেশের খাদ্য কালচারকে আক্রমণ করছে সিলেটি বংশোদ্ভূত নাদিয়া। সে মন্তব্য করেছে, এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্য সংস্কৃতিতে নাকি ডেজার্ট বা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য নেই। এছাড়াও এদেশের খাদ্য নিয়ে আরো অনেক কটাক্ষ করেছে সে।

উগ্র খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা (নাদিয়ার পেয়ারের সাদা চামড়ার ব্রিটিশদের পূর্বপুরুষেরা) যখন মুসলিম ভূখণ্ড আক্রমণ করেছিল, তখন তারা চিনি ব্যবসায়ী মুসলমান কাফেলার মুখোমুখি হয়। ক্রুসেডাররা তখন চিনির মিষ্টতার কারণে অবাক হয়ে তার নাম দিয়েছিল ‘সুইট সল্ট’ বা মিষ্টি লবণ! আমরা জানি যে, ইউরোপের খ্রিস্টানরা অরিজিনালি সিদ্ধ খাদ্য খায়। মসলা থেকে শুরু করে চিনি, খাবারের স্বাদ বাড়ানোর কোন উপকরণের ব্যবহারই তারা জানতো না। কারণ মুসলিমরা যখন নগরসভ্যতা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের উচ্চ শিখরে অবস্থান করছিল, তখন খ্রিস্টানরা ছিলো সভ্যতা থেকে অনেক দূরে। পরবর্তীতে ইউরোপের ভাষায় যে sugar শব্দটি এসেছে, তার উৎপত্তি আরবীতে ব্যবহৃত sukkar শব্দ থেকে।

চিনি শিল্প সর্বপ্রথম বিস্তার লাভ করে মুসলিম শাসিত বাংলায়। লাল চিনি (পরিশোধিত সাদা চিনি নয়) ছিলো মসলিনের ন্যায় বাংলার একটি অন্যতম রপ্তানি দ্রব্য। মার্কো পোলো উল্লেখ করেছে যে, ত্রয়োদশ শতকে বাংলাদেশ থেকে প্রধান প্রধান রপ্তানীকৃত দ্রব্যের মধ্যে চিনি ছিল অন্যতম। পর্তুগীজ পর্যটক বারবোসা-র বিবরন থেকে জানা যায়, ষোড়শ শতকের গোড়াতে ভারতের বিভিন্ন দেশে, শ্রীলঙ্কায়, আরবে, পারস্যে বাংলাদেশ চিনি রপ্তানী করেছে।

পরবর্তীতে বাংলার মুসলমানদের কাছ থেকে চিনিশিল্পের বিষয়টি আয়ত্ত্ব করে এ অঞ্চলে ব্যবসার জন্য আসা আরবগণ। তাঁরা বাংলার মুসলমানদের ন্যায় মধ্যপ্রাচ্যে বড় বড় আখের ক্ষেত ও সুগার রিফাইনারি মিল তৈরী করা শুরু করে। তৎকালীন স্পেন বা আল আন্দালুস ছিলো মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রধান চিনি উৎপাদন কেন্দ্র।

বিপরীতে চিনিকে দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যে পরিণত করার মতো অবস্থায় আসতে সাদা চামড়ার খ্রিস্টানদের বহু সময় লেগেছে। চিনি ছিলো তাদের কাছে মূল্যবান বস্তু। স্পেনের ইসাবেলা তার মেয়ের জন্মদিনে মেয়েকে উপহার দিয়েছিল একবাক্স চিনি! এই অবস্থা বহুদিন পর্যন্ত বিদ্যমান ছিলো, যতোদিন না চিনিশিল্পের জন্মদাতা বাংলাকে দখল করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। বাংলা দখলের পর এ অঞ্চল থেকে ব্রিটেনে হু হু করে চিনির সরবরাহ বাড়তে থাকে, যার কারণে একপর্যায়ে চিনিকে বিলাসদ্রব্য থেকে খাদ্যের পর্যায়ে আনতে অভ্যস্ত হয় ব্রিটিশ ও ইউরোপীয়রা।

এখন নাদিয়ার নিকট প্রশ্ন, সে কী তার কোন কেক আজপর্যন্ত চিনি ছাড়া বানিয়েছে? যেখানে কোন ডেজার্ট চিনি ছাড়া হয় না, সেখানে চিনিশিল্পের জন্মদাতা বাঙালি মুসলমান জাতিকে সে কটাক্ষ করেছে খাদ্যে ডেজার্ট নেই বলে। বরং বাস্তবতা এই যে, বাংলাকে দখল না করলে আজকে ব্রিটিশরা চিনিই খেতে পারতো না, ডেজার্ট তো দূরের কথা।

এ অঞ্চলের মানুষ টেবিলে খাবার খেতো না, এ নিয়েও কটাক্ষ করেছে এই নাদিয়া। কিন্তু দোর্দণ্ড প্রতাপশালী মোগল বাদশাহদের যে রাজকীয় খাবার, সেগুলো কিন্তু তারা খেতেন সুন্নত অনুযায়ী মাটিতে বসেই, আরবরা আজও খায়। মুসলমানদের খাবার গ্রহণ থেকেই নাদিয়ার পেয়ারের ব্রিটিশরা শিখেছে কিভাবে মসলা ব্যবহার করতে হয়, কিভাবে চিনি ব্যবহার করতে হয়, কিভাবে সভ্য-ভব্য হিসেবে চলতে হয়।

মাথায় পট্টি বাঁধলেই যে মুসলমান হওয়া যায় না, তার প্রমাণ হলো এই নাদিয়া। মুসলমান হতে হলে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হয়। কয়েকমাস আগে শুনেছিলাম, নাদিয়াকে নাকি ব্রিটেনের লোকজন গালিগালাজ করে থাকে মাথায় পট্টি বাঁধার কারণে। ঐসব মুসলমানদেরকেই আল্লাহ পাক কাফির মুশরিকদের দ্বারা লাঞ্ছিত করেন, যারা কাফির মুশরিকদের বড় মনে করে মুসলমানদেরকে হেয় করে থাকে।

সূত্র:
১) উইকিপিডিয়া: https://goo.gl/3mp0O6
২) http://blog.bdnews24.com/MottalibDarbari/49203
৩) http://www.abasar.net/UNIbibidh_sugar.htm
৪) http://www.banglasanglap.co.uk/?p=4828

Post a Comment

 
Top