আমেরিকায় প্রায়ই বিভিন্ন স্কুল কিংবা প্রতিষ্ঠানে বন্দুক হামলায় শত শত লোক প্রাণ হারায়। সেসব হামলা করে আমেরিকার স্থানীয় সাদা চামড়ার খ্রিস্টানরাই, যার মূল কারণ আমেরিকার অবাধ অস্ত্র আইন। আমেরিকায় সিরিয়াল কিলিং বন্ধ করার জন্য অবাধ অস্ত্র আইন বন্ধ করতে বলা হয় প্রায়ই, কিন্তু কোন শাসকই তার সাহস করে না। কারণ অবাধে অস্ত্র বহন ও বেচাকেনাকে তারা মনে করে তাদের ঐতিহ্য।

আমেরিকানরা কিন্তু এতো প্রাণহানির পরও তাদের ঐতিহ্যকে ত্যাগ করে না, লজ্জা পায় না। কারণ তাদের জাতীয় সংগীতে বলা হয়েছে-

And the rockets' red glare, the bombs bursting in air,
Gave proof through the night that our flag was still there;

এর অর্থ যখন রকেটের পিছনে লাল শিখা দৃশ্যমান হয়, যখন আকাশের বুকে বোম ফাটতে থাকে, তখন নিশ্চিত হওয়া যায় যে আমেরিকার পতাকা দণ্ডায়মান আছে। এই মূলনীতিকে ধারণ করেই আমেরিকার সৈন্যরা বিভিন্ন দেশে বোমা হামলা করে , কারণ তারা বিশ্বাস করে বোমা না ফাটালে তাদের পতাকা টিকিয়ে রাখা যাবে না।

আর ফ্রান্সের জাতীয় সংগীতে কী বলা আছে জানেন-
Ils viennent jusque dans vos bras
Égorger vos fils, vos compagnes!
Aux armes, citoyens,
Formez vos bataillons,

ফ্রেঞ্চ ভাষায় রচিত তাদের জাতীয় সংগীতে বলা হয়েছে, হে জনগণ, শত্রুরা তোমাদের স্ত্রী-সন্তানদের গলা কাটতে আসছে। জ্বি পাঠকেরা, আসলেই কিন্তু গলা কাটার কথাই বলা আছে ফ্রান্সের জাতীয় সংগীতে! এরপর ফ্রান্সবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয়েছে Aux armes, citoyens,Formez vos bataillons, অর্থাৎ হে জনগণ তোমরা অস্ত্র হাতে নাও এবং ব্যাটেলিয়ন তৈরী করো।

এই কথাগুলো এজন্য বললাম, কারণ গুলশান হামলার পর সর্বস্তরের হিন্দু আর নাস্তিকেরা অনলাইনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইসলামের বিরোধিতা করতে। কুরআন শরীফ থেকে বিভিন্ন আয়াত শরীফ কোট করে মুসলমানদের লজ্জা দেয়ার চেষ্টা করছে। তারা কিন্তু সফল, কারণ মুসলমানরাও লজ্জা পাচ্ছে। তারা বিভিন্নভাবে যুদ্ধের আয়াত শরীফসমূহ ডিনাই করার চেষ্টা করছে।

আচ্ছা আপনারা মুসলমানরা লজ্জা পাচ্ছেন কেন? আমেরিকার জাতীয় সংগীতে বোমা আর রকেটের উল্লেখ থাকার কারণে তারা লজ্জা পায়? ফ্রান্সের জাতীয় সংগীতে গলা কাটার উল্লেখ থাকার কারণে তারা লজ্জা পায়? বোমা-রকেট মারতে আর গলা কাটতে যারা উদ্যত, তাদের বিপরীতে যুদ্ধের আয়াত শরীফ নাযিল না করলে মুসলমানরা বাঁচবে? আল্লাহ পাক তো মুসলমানদের বাঁচানোর জন্যই কুরআন শরীফ নাযিল করেছেন।

আসলে সবকিছুর জন্য দায়ী মুসলমানদের এই হীনম্মন্যতা, তা সে অনলাইনে কটূক্তি হোক কিংবা গুলশান হামলা হোক। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ে দেখতাম, ছিঁচকাঁদুনে টাইপের ছেলেদের সবাই ছোটখাটো বিষয়ে কাঁদিয়ে মজা নিতে চেষ্টা করতো। ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশকেও সবাই পুরোহিত মারার মতো ছোটখাটো বিষয় দিয়ে বেকায়দায় ফেলতে চায়, কারণ সেও ছিঁচকাঁদুনে প্রকৃতির। সরকারের এই দুর্বলতার কারণেই ষড়যন্ত্র করে গুলশান হামলা করেছে সরকারের শত্রুরা, কারণ তারা জানে এই সরকার সামান্যতেই মাথানত করবে, নিজেকে দোষী বলে স্বীকার করবে।

আজকে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যেটা বলেছেন, গুলশান হামলাটা তাদের ব্যর্থতা, আমি এটাকে মোটেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি না। আমেরিকায় প্রতি বছর বন্দুকযুদ্ধে সরকারি হিসাবে ১২ হাজার এর অধিক লোক মরার পরও সেদেশের শাসকগোষ্ঠী কী বলেছে, এটা তাদের ব্যর্থতা? আর আপনি মাত্র ২০ জন মরাতেই দেশের সরকারকে ব্যর্থ বলে সাব্যস্ত করলেন!

গুজরাট দাঙ্গার মূল হোতা মোদি তো মুসলমান হত্যা করার পরও কোন অনুশোচনা করে না। উল্টো দম্ভভরে বলে যে, কুকুর মরলেও সে দুঃখ পেতো। তাহলে আপনি সজীব ওয়াজেদ জয় কেন লজ্জা পাবেন, গুলশান হামলার পেছনে এদেশের সরকার কিংবা সমাজ কোনটাই তো দায়ী নয়। আপনার ব্যর্থতাটা কোথায় যে আপনি ব্যর্থতা স্বীকার করতে যাবেন?

হিন্দুরা নিজ হাতে মানুষ মেরে লজ্জার ধার ধারে না, আর ওদিকে মুসলমানরা সমাজবিচ্ছিন্ন কতগুলো ইংলিশ মিডিয়াম স্টুডেন্টদের অপকর্মের কারণে নিজের ধর্মগ্রন্থ নিয়ে লজ্জিত হচ্ছে! যুদ্ধের আয়াত শরীফগুলো ডিনাই করার চেষ্টা করছে। ধিক আপনাদেরকে ধিক! দুনিয়াতে এমন হিজড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় বোধহয় আর একটাও নেই। আপনাদের শত্রুরা হাজার অপকর্ম করেও লজ্জা পায় না, বিপরীতে আপনারা পান থেকে চুন খসলেই লজ্জায় এতটুকু হয়ে যান। এই হীনম্মন্যতা ও সংকোচ কাটিয়ে উঠতে না পারলে আপনাদের শত্রুরা আপনাদেরকে বারবার উত্যক্ত করতে চেষ্টা করবে, যেভাবে স্কুলের ছিঁচকাঁদুনে বাচ্চাটিকে সবাই উত্যক্ত করে থাকে। গুলশান হামলা একের পর এক হতেই থাকবে, পুরোহিত হত্যা একের পর এক হতেই থাকবে। অনলাইনে নাস্তিক ও হিন্দুদের কটূক্তি একের পর এক চলতেই থাকবে।

Post a Comment

 
Top